ডেস্ক রিপোর্ট ::অগ্রহায়ণ মাস—বাংলার কৃষিনির্ভর সমাজে এটি ছিলো এক আনন্দময় ও কর্মব্যস্ত ঋতুর নাম। ধান কাটার উৎসব, খেতের চারদিকে হলুদ ধানের গন্ধ আর সেই সঙ্গে গরুর পিঠে বসে ধান মাড়াই—এই সবই এক সময় ছিলো বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি। অথচ আজকের প্রজন্মের কাছে এসব দৃশ্য শুধুই গল্প, কল্পনার মতো।
এক সময় গরুই ছিলো কৃষকের প্রধান সহচর। লাঙ্গল-জোয়াল কাঁধে নিয়ে ভোরে মাঠে নামা, কিংবা ধান মাড়াইয়ের মৌসুমে গরু দিয়ে গোল পাকিয়ে ধান মাড়ানো ছিলো এক গর্বের বিষয়। অগ্রহায়ণের সকালে মাঠে গরুর হুঙ্কার, মাড়াইয়ের শব্দ আর কৃষকের মুখে সুর মিলানো গান—এসবই ছিলো গ্রামীণ বাংলার প্রাণ।
কিন্তু কালের স্রোতে বদলে গেছে অনেক কিছু। তথ্য প্রযুক্তির জয়যাত্রা, আধুনিক যন্ত্রের আগমন আর শহরমুখী জীবনের টানে হারিয়ে যেতে বসেছে আমাদের চিরচেনা সেই গ্রামীণ কৃষিচিত্র। এখন ধান মাড়াই হয় কম্বাইন হারভেস্টার বা থ্রেসার মেশিন দিয়ে, হালচাষ হয় ট্রাক্টরে। গরু আর লাঙ্গলের বদলে এসেছে যান্ত্রিকতা।
নতুন প্রজন্মের চোখে গরু দিয়ে চাষ, ধান মাড়াই কেবল ইউটিউব ভিডিও বা গল্পের বইয়ের বিষয়। তারা হয়তো জানেই না, কীভাবে কৃষক তার গরুকে সন্তানতুল্য ভালোবাসত, কীভাবে একটি গরু হয়ে উঠত একটি পরিবারের আশার প্রতীক।
তবুও, আমাদের উচিত এই হারানো ঐতিহ্যকে ধরে রাখা, নতুন প্রজন্মকে জানানো—কোন মাটির গন্ধ, কোন ঘামের দামে তৈরি হয়েছিল আমাদের এই কৃষিনির্ভর সমাজ। গরু দিয়ে হালচাষ কিংবা ধান মাড়াই শুধুই কৃষিকাজ নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের শিকড়ের পরিচয়।
সময় এসেছে এই ঐতিহ্যকে নতুন চোখে দেখা, সংরক্ষণ করা, এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার। প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে আমরা এগোবো ঠিকই, তবে শেকড়কে ভুলে গেলে সে অগ্রগতি অপূর্ণ থেকে যাবে।
Leave a Reply