অবৈধ ইটভাটার দৌরাত্ম্য, পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা

সম্পাদকীয় কলাম::

দেশজুড়ে ইটভাটার পরিবেশ দূষণ থামছেই না। সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে বেশিরভাগ ইটভাটাই পরিবেশসম্মত পদ্ধতি অনুসরণ না করে চলছে। গবেষণা অনুযায়ী, দেশের ৮০ শতাংশ ইটভাটার কোনো বৈধ অনুমোদন নেই। আর বৈধ-অবৈধ ইটভাটার ৯০ শতাংশেই কাঠ পোড়ানো হচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি।

 

অবৈধ ইটভাটাগুলোর বেশিরভাগই তিন ফসলি জমিতে স্থাপিত হয়েছে, যা কৃষিজমির উর্বরতা কমিয়ে দিচ্ছে। এমনকি ৬০ শতাংশ ইটভাটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে গড়ে উঠেছে, যা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

 

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০১০ ও ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৩ অনুযায়ী সংরক্ষিত বন, সিটি করপোরেশন, আবাসিক এলাকা, ফলের বাগান ও উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। তিন ফসলি জমি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে ইটভাটা নির্মাণও অবৈধ। এছাড়া, ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এসব আইন লঙ্ঘন করলে তিন বছর কারাদণ্ড বা তিন লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।

 

২০১৮ সালের সংশোধিত আইন অনুযায়ী, ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে কাঠ ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবুও বাস্তবে এসব আইন কার্যকর হচ্ছে না। স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করেই ইটভাটা ব্যবসা অব্যাহত রয়েছে।

 

চাষযোগ্য জমি রক্ষায় সরকার ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে সব সরকারি নির্মাণকাজে ইটের পরিবর্তে কংক্রিট ব্লক ব্যবহার বাধ্যতামূলক হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮০ শতাংশ এবং পরবর্তী বছরে ১০০ শতাংশ নির্মাণকাজে কংক্রিট ব্লক ব্যবহারের কথা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনা কতটা বাস্তবায়িত হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

 

বর্তমানে ইটভাটাগুলো ইট তৈরির মৌসুমে রয়েছে, এবং প্রচুর পরিমাণে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি নির্মাণকাজে এসব অবৈধ ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই প্রথমেই সরকারি নির্মাণকাজে ইটের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে বৈধ ইটভাটাগুলোকে কংক্রিট ব্লকের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য করতে হবে। আইন বাস্তবায়ন করা গেলে কৃষিজমি, বন ও পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা