এসটিভি ডেস্ক::আজ মঙ্গলবার পবিত্র শবে বরাত। যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে রাতে সারাদেশে পবিত্র পালিত হবে এ পবিত্র রজনী। এ উপলক্ষে সারাদেশে মসজিদ ও মাদ্রসাগুলোতে বিভিন্ন আয়োজন রয়েছে।মুসলিম মিল্লাতের জন্য মহিমান্বিত ও ফজিলতপূর্ণ পূণ্যময় রাত লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাত। লাইলাতুল বরাতে মুমিনের জন্য রয়েছে সীমাহীন বরকত, মুক্তি ও কল্যাণ। ফজিলতপূর্ণ মহিমান্বিত পবিত্র শবে বরাত মাহে রমজানের পূর্বের মাস অর্থাৎ শাবান মাসে হওয়াতে এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য মুমিন মুসলমানদের নিকট অনেক।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এরশাদ করেন, শাবান মাস হলো আমার মাস, আর রমজান মাস হলো আল্লাহ তায়ালার মাস। শাবান মাসের ১৪তম তারিখের দিবাগত রাত হচ্ছে লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাত। গোনাহ থেকে মুক্তি লাভের এক অনন্য রাত শবে বরাত। এই পবিত্র রাতে ইবাদত করার ফলে মুমিন মুসলমানদের গোনাহ মাফ হয়ে থাকে এবং আল্লাহর কাছে মুমিনের মর্যাদা বৃদ্ধি হয়ে থাকে।
রাসুল (স.) বলেন, শাবান মাসের রোজা আমার নিকট অন্য মাসের তুলনায় অধিক প্রিয়। তোমাদের নিকট যখন শাবানের রাত (শবে বরাত) উপস্থিত হবে তখন তোমরা সে রাতে জাগ্রত থাকো, নামাজ পড়, কুরআন পড়, যিকির আযকার তাসবিহ পড়, দোয়া কর এবং দিনের বেলা রোজা রাখ। কারণ এ রাতে আল্লাহতায়ালা সূর্যাস্তের পর থেকে ফজর পর্যন্ত প্রথম আকাশে এসে ঘোষণা করতে থাকেন, আছো কোনো পাপী আমার নিকট প্রার্থনা করবে ? আমি তার পাপ ক্ষমা করে দিব। রিযিক প্রার্থী কেউ আছো কি ? আমি তাকে রিযিক দান করব। বিপদ থেকে পরিত্রাণ পেতে চাও কেউ কি আছো ? আমি তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করে দিব। এভাবেই ফজর পর্যন্ত আল্লাহতায়ালা তার বান্দাহদের ডাকতে থাকেন।
হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, রাসুল (স.) এরশাদ করেন, শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে অর্থাৎ শবে বরাতে আল্লাহতায়ালা তার মাখলুকদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন অর্থাৎ এ রাতে আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে মাগফিরাতের দরজা খুলে দেন। সীমাহীন ফযিলতপূর্ণ রাত লাইলাতুল বরাত। শবে বরাত ফারসি শব্দ। শবে অর্থ রাত, আর বরাত অর্থ মুক্তি বা ভাগ্য। যাকে আরবিতে লাইলাতুল বরাত বলা হয়। যার মূল অর্থ হচ্ছেÑ সৌভাগ্যের রজনী বা মুক্তির রজনী।
চন্দ্র মাসের অষ্টম মাস শাবান। শাবানের চাঁদে এমন একটি ফজিলত ও বরকতময় রাত আছে সে রাতে ইবাদত-বন্দেগী করলে সীমাহীন সওয়াবের অধিকারী হওয়া যায়। আর এই রাতটিই হলো লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাত। রাসুল (স.) বলেছেন, শবে বরাতের পরবর্তী বছর পৃথিবীতে কে জন্মগ্রহণ করবে, কে মৃত্যুবরণ করবে তা লিপিবদ্ধ করা হয়। এ রাতে বনী আদমের আমলনামা আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। আর এ রাতেই তাদের রিযিক বণ্টন করা হয়। এককথায় সৃষ্টিকূলের সকল কিছুর ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে থাকে লাইলাতুল বরাতে।
গোনাহ মাফের এক অনন্য সুযোগ হিসেবে আল্লাহতায়ালা পবিত্র লাইলাতুল বরাত দান করেছেন মুমিন বান্দাহদের জন্য। বান্দাহ যেন নিজেদের অতীত পাপাচার থেকে মুক্ত হয়ে আজিমুশ্বান পবিত্র মাহে রমজানুল মোবারকের জন্য নিজেদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে পারে এজন্যই আল্লাহতায়ালা রমজান শুরু হওয়ার মাত্র অল্প কিছুদিন পূর্বে পবিত্র লাইলাতুল বরাত বান্দাহর জন্য উপহার হিসেবে দান করেছে। তাই আসুন এই বরকতময় রাতে আমরা বেশি করে নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত, দুরুদ শরিফ, তওবা এস্তেগফার, যিকির আযকার, সাধ্যমতো দান-খয়রাত করাসহ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নিকট নিজেদের অতীত পাপাচারের কথা স্মরণ করে কান্নাকাটির মাধ্যমে অতিবাহিত করি এবং সম্ভব হলে পরদিন রোজা রাখি।
আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে অত্যন্ত আদবের সঙ্গে পবিত্র লাইলাতুল বরাতে ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে অতিবাহিত করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
Leave a Reply