ইনাতগঞ্জের ডাকঘর: প্রযুক্তির দৌড়ে হারিয়ে যাওয়া এক যুগের গল্প

ডেস্ক রিপোর্ট::একসময় চিঠিই ছিল মানুষের আবেগ প্রকাশের প্রধান মাধ্যম। দূর-দূরান্তের প্রিয়জনের কাছে মনের কথা পৌঁছে দেওয়ার একমাত্র ভরসা ছিল ডাক ব্যবস্থা। বিশেষ করে গ্রামবাংলার মানুষদের জন্য ডাকঘর ছিল যোগাযোগের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। কিন্তু সময়ের স্রোতে, প্রযুক্তির বিপ্লবে সেই ডাকঘর আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। ইনাতগঞ্জের ডাকঘর তারই এক জলন্ত উদাহরণ।

 

আজ থেকে দেড়-দুই দশক আগে ইনাতগঞ্জ ডাকঘর ছিল কর্মব্যস্ত এক স্থান। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকত চিঠি পাঠানোর জন্য। পরীক্ষার ফলাফল, চাকরির নিয়োগপত্র, বিদেশ থেকে আসা আত্মীয়দের বার্তা—সবকিছুই পৌঁছাত ডাক বিভাগের মাধ্যমে। পোস্টম্যানের সাইকেলের ঘণ্টা শুনলেই গ্রামবাসীর মনে এক ধরনের উত্তেজনা কাজ করত—কার চিঠি এসেছে? কোনো সুসংবাদ আছে কি?

ঈদের আগে ডাকঘর থাকত সবচেয়ে ব্যস্ত। প্রিয়জনদের কাছে ঈদের কার্ড পাঠানো ছিল এক আবেগময় রীতি। বিভিন্ন ডিজাইনের কার্ড কিনে ডাকঘরের মাধ্যমে তা পাঠানোর মধ্যে ছিল এক বিশেষ আনন্দ।

 

কিন্তু প্রযুক্তির উন্নয়নে সেই দৃশ্য এখন শুধুই স্মৃতি। মোবাইল ফোনের সহজলভ্যতা, ইন্টারনেটের প্রসার, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মেসেজিং অ্যাপের ব্যাপক ব্যবহার ডাকব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তাকে প্রায় শূন্যে নামিয়ে এনেছে। এখন আর কেউ দিনের পর দিন অপেক্ষা করে চিঠির উত্তর পাওয়ার অপেক্ষায় থাকে না। এক মুহূর্তেই হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ সম্ভব।

ফলে ইনাতগঞ্জ ডাকঘর আর আগের মতো ব্যস্ততা দেখেনি বহু বছর। চিঠির বাক্সটি এখন পরিত্যক্ত, যেন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একসময় যেখানে শত শত চিঠির আনাগোনা ছিল, সেখানে এখন শুধুই শূন্যতা।

 

ডাকঘর যদিও হারিয়ে যাচ্ছে, তবে এটি পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। এখনো সরকারি কাগজপত্র, ডাকযোগে পাঠানো আবেদনপত্র, পার্সেল, পোস্টাল অর্ডারের মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা ডাক বিভাগের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তবে একথা স্বীকার করতেই হয় যে, চিঠির সেই রোমান্টিক যুগ আর নেই।

ইনাতগঞ্জের ডাকঘর হয়তো একসময় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে, কিন্তু যারা একসময় সেখানে চিঠি পাঠাতে ভিড় করতেন, তাদের হৃদয়ে এটি আজীবন অমলিন হয়ে থাকবে। সময় বদলালেও, অনুভূতি বদলায় না। চিঠির বাক্স হয়তো আর চিঠি সংগ্রহ করবে না, কিন্তু মানুষের স্মৃতিতে এটি থেকে যাবে ভালোবাসা ও আবেগের এক প্রতীক হয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা