নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ বাজারে ভুয়া পল্লী চিকিৎসক মিজানুর রহমান আব্দুল্লার ভুল চিকিৎসায় হাবিব উল্লা(৬৫) নামে এক বৃদ্ধ’র মৃত্যু হয়েছে। তিনি ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের বাজারছড়া গ্রামের বাসিন্দা। ঘটনার পর মৃত ব্যক্তির স্বজনরা ভুয়া ডাক্তার মিজানুর রহমান আব্দুল্লাকে তার চেম্বারে অবরোদ্ধ করে রাখেন। পরে এলাকার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ বিষয়টি দেখে দেয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হলেও রোগীর স্বজনদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানাযায়,উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের বাজারছড়া নামক গ্রামের হাবিব উল্লা গতকাল রবিবার দুপুরে হার্টের সমস্যা নিয়ে পল্লী চিকিৎসক মিজানুর রহমান আব্দুল্লার চেম্বারে আসেন। এ সময় তার বুকে প্রচন্ড ব্যথা ছিল। এ সময় ভুয়া চিকিৎসক মুমুর্ষ ব্যক্তি ওই রোগীকে রোগ নির্ণয় নাকরেই ইনজেকশন পুশ করেন। সাথে সাথে হাবিব উল্লা নিস্তেজ হয়ে পড়েন। সাথে সাথে রোগীর স্বজনরা ইনাতগঞ্জ বাজারে এমবিবিএস ডাক্তার ফয়জুল হোসেনের কাছে নিয়ে আসলে তিনি মৃত ঘোষণা করেন।
এ সময় ডাক্তার ফয়জুল হোসেন ভূয়া চিকিৎসক মিজানুর রহমান আব্দুল্লাহকে তার চেম্বারে ডেকে এনে কি ইনজেকশন পুশ করেছেন বা প্রেসক্রিপশনে লেখা নেই কেন জানতে চাইলে তিনি ইনজেকশন দেয়ার কথা স্বীকার করলেও কি ইনজেকশন পুশ করেছেন সেটা বলেননি।
জানাযায়,মিজানুর রহমান আব্দুল্লাহ বাড়ি বরিশালে। তিনি গোয়াবাজারে একজন ডাক্তারের কম্পাউন্ডার হিসেবে কাজ করতেন। পরবর্তীতে তিনি বিগত প্রায় ১০/১২ বছর পূর্বে ইনাতগঞ্জ বাজারে ফাতেমা ফার্মেসীতে এমবিবিএস ডিগ্রী ব্যবহার করে রেজিষ্টেশন নাম্বারসহ সাইন বোর্ড বসিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করেন। এমবিবিএস ডাক্তার ভেবে এলাকার রোগী সাধারন তার কাছে ছুটে আসেন। চেম্বারও জমে উঠে বেশ ভাল। এভাবে প্রায় ২/৩ বছর চলার পর তার আচার আচরনে এলাকাবাসীর সন্দেহ হয় আসলেই সে এমবিবিএস কিনা।
পরে এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রক্ষিতে তৎকালীন নবীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার( ভূমি) মাহমুদুল হক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে ইনাতগঞ্জ বাজার ফাতেমা ফার্মেসীতে মিজানুর রহমান আব্দুল্লার চেম্বার অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানকালে সে এমবিবিএস সার্টিফিকেট দেখাতে পারেনি। ভূয়া এবং প্রতারনা করে চিকিৎসা পরিচালনা করায় মোবাইল কোর্টে তাকে ৬ মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। প্রায় সাড়ে ৩ মাস কারাভোগের পর সে আর কোনদিন চিকিৎসা করবেনা মর্মে মাননীয় আদালতে লিখিত দেয়ার পর জামিনে বেরিয়ে আসে এবং আসার পরপরই পূণরায় ফাতেমা ফার্মেসীতে চিকিৎসা শুরু করে। যা আজও অব্যাহত রয়েছে।
এলাকাবাসী জানান মিজানুর রহমান আব্দুল্লাহ একজন প্রতারক চিকিৎসকই নন,তার চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রায়ই তিনি চেম্বারে বসে মোবাইল ফোনে কথা বলে ব্যস্ত থাকেন। তিনি এক সন্তানের জনক হলেও স্ত্রী সন্তান রেখে নবীগঞ্জের বড় ভাকৈর গ্রামে স্ত্রী অনুমতি না নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। খবর পেয়ে বড় স্ত্রী তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে প্রায় দুই মাস কারাভোগ করে জামিনে বেরিয়ে আসেন।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহিউদ্দিন বলেন ঘটনাটি দু:খজনক। খুব শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে।
Leave a Reply