বিশেষ প্রতিনিধি::নবীগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইনাতগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়। ১৯৭৭ সালে বারবার নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী প্রয়াত মোতাহের রহমান আক্কা’নেতৃত্বে এলাকার শিক্ষানুরাগী ও সচেতন মানুষদের সার্বিক সহযোগিতায় মাত্র ৮-৯ জন শিক্ষার্থী নিয়ে বিদ্যালয়টির যাত্রা শুরু হয়।
প্রথম প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন প্রবীর রায়। আর সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন স্থানীয় বাসিন্দা, প্রয়াত আলকাব হোসেন,আলীপুর গ্রামের বিধান দাশ,কৈইখাই গ্রামের আব্দুস শহীদ,মনসুরপুর গ্রামের ফারুক আহমেদ ও মোোস্তফাপুর গ্রামের মুজিবুর রহমান।
এরপর ১৯৮১ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন নাদামপুর গ্রামের আতাউর রহমান স্যার, যিনি ২০১৩ সাল পর্যন্ত সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর নেতৃত্বে বিদ্যালয়টি শিক্ষার মানোন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
আতাউর রহমান স্যারের অবসর গ্রহণের পর, ২০১৪ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন বদরুল আলম। তার যোগদানের পর বিদ্যালয়ে এসেছে নতুন উদ্দীপনা। বর্তমানে তিনি দক্ষতার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন।
বিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন লন্ডন প্রবাসী সাজান উদ্দিন। তাঁর একক অর্থায়নে বিদ্যালয়ের চারপাশে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। এছাড়া শেভরন বাংলাদেশ ও প্রবাসী শিক্ষানুরাগীদের সহযোগিতায় একটি মসজিদের নির্মাণকাজও চলমান রয়েছে।
শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নও হয়েছে। টিনসেট ক্লাসরুম থেকে বর্তমানে বিদ্যালয়ে রয়েছে তিনটি আধুনিক ভবন। শিক্ষকদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ জনে। দক্ষ শিক্ষক-শিক্ষিকার নিরলস পরিশ্রমে শিক্ষার মান অনেক এগিয়ে গেছে। প্রতিবছর এসএসসি পরীক্ষার সন্তোষজনক ফলাফল প্রতিষ্ঠানটির সুনাম বৃদ্ধি করেছে।
বিদ্যালয়টি কেবল ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের শিক্ষার্থীদের জন্য সীমাবদ্ধ নয়; পাশের পাইলগাঁও, কসবা, ও চরগাঁও গ্রামের শিক্ষার্থীরাও এখানে পড়ালেখা করছেন। বর্তমানে বিদ্যালয়ে প্রায় ১,১০০ শিক্ষার্থী রয়েছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ক্রমাগত উন্নত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের শুধু বইয়ের শিক্ষা নয়, নৈতিক এবং সামাজিক মূল্যবোধেও শিক্ষিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। দক্ষ শিক্ষকরা প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় আগ্রহী করে তুলছেন।
তাছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। স্কাউট, বিতর্ক, বিজ্ঞান মেলা এবং সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতাগুলোতে তারা নিয়মিত বিজয় অর্জন করছে।
প্রধান শিক্ষক বদরুল আলমের উদ্যোগে বিদ্যালয়ের সামনের ফুলের বাগান বিদ্যালয়ের সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি করেছে। ফুলের সৌরভে ভরপুর বিদ্যালয়ের পরিবেশ প্রতিটি শিক্ষার্থীর মধ্যে এক অন্যরকম আবেগের সৃষ্টি করে।
ইনাতগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠান শুধু শিক্ষা নয়, বরং একটি অঞ্চলকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এটি আজ শুধুমাত্র একটি বিদ্যালয় নয়, বরং একটি আলোকবর্তিকা, যা অজপাড়া গ্রামের শিক্ষার্থীদের জীবনে পরিবর্তন আনছে। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আগামী দিনে দেশ ও জাতিকে আরও সমৃদ্ধ করবে, এটাই এলাকাবাসীর প্রত্যাশা।
Leave a Reply