কানাইঘাট প্রতিনিধি :: কানাইঘাটে চতুল বাজারে পুলিশের উপর হামলার ঘটনাটি গতকাল শুক্রবার উপজেলা প্রশাসনিক বৈঠকের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। জানা যায়, নোভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কানাইঘাটের চতুল বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান ব্যাতীত অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে গিয়ে বাজারের কিছু ব্যবসায়ী ও উশৃঙ্খল জনতার হামলার মুখে পড়ে কানাইঘাট থানা পুলিশ। এ নিয়ে পুলিশের উপর হামলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশনা প্রদান করলে বিষয়টি সামাজিক ভাবে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ঘটনার পর থেকে চতুল এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও জনপ্রতিনিধিরা বার বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বারিউল করিম খান ও থানার ওসি মোঃ শামসুদ্দোহা পিপিএম’র সাথে বৈঠক করেন। দফায় দফায় চতুল ইউনিয়নের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, পুলিশ সুপারের সাথে যোগাযোগ করে পুলিশের উপর হামলার ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জাজনক উল্লেখ করে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করেন এবং ভবিষ্যতে চতুল বাজারে এ ধরনের ঘটনার আর কখনো পুনরাবৃত্তি হবে না মর্মে আশ^স্থ করলে এতে মনে গলে পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিনের। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে নির্বাহী কর্মকর্তা বারিউল করিম খান ও থানার ওসি শামসুদ্দোহা পিপিএম’র উপস্থিতিতে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য চতুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ আলোচনায় বসেন। সভার শুরুতে চতুল ইউনিয়নের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন এবং স্থানীয় চেয়ারম্যান মাওঃ আবুল হোসেন সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিনের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলেন, তিনি পুলিশের উপর হামলার সাথে জড়িতদের ইতিমধ্যে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সবধরনের সামাজিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। চতুল বাজারে আর কখনো এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না বলে আশ^স্থ করেন। বৈঠক চলাকালে পুলিশের উপর হামলার সাথে জড়িত কয়েকজনকে নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে হাজির করা হলে, তারা পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় নিঃশর্তে ক্ষমা প্রার্থনা ও মুছলেখা প্রদান করে। যারা পুলিশের উপর হামলা চালিয়েছে, তাদের সবাই চতুল বাজারের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অভিযানে অংশগ্রহণ এবং সেনিটাইজার কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থেকে বাজারের সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখবে মর্মে বলে অঙ্গীকার করে। সভায় নির্বাহী কর্মকর্তা বারিউল করিম খাঁন বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সবাইকে রক্ষা ও সচেতন করার জন্য সরকার নানা ধরনের নির্দেশনা দিয়েছে। সেই আলোকে উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে, যাতে করে আপনারা সবাই ভালো থাকেন। কিন্তু সরকারী নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে যদি পুলিশের উপর হামলার ঘটনা ঘটে, এটি অত্যন্ত শাস্তিযোগ্য অপরাধ। চতুল সহ কানাইঘাট উপজেলার সুনাম ক্ষুন্ন হয় এমন যেকোন ধরনের কর্মকান্ড থেকে আমাদের সবাইকে বিরত থাকতে হবে। এলাকার ঐতিহ্য বজায় রাখতে হবে। থানার অফিসার ইনচার্জ শামসুদ্দোহা পিপিএম বলেন, সরকারী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশের উপর চতুল বাজারে যে হামলা হয়েছে এটা কোন বিবেকবান মানুষ করতে পারে না। কিন্তু পুলিশ জনগণের জন্য কাজ করে থাকে, এতবড় একটি অপরাধ সংঘটিত করার পরও সিলেটের বিজ্ঞ পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন পিপিএম স্যার সহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করতে কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেন। তারপর চতুলের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে সম্মান দিয়ে জড়িতদের ক্ষমা করে দিয়ে পুলিশ জনগণের সেবক সেটা আবারো প্রমাণ করে দিয়েছেন সিলেটের পুলিশ সুপার স্যার। বড়চতুল ইউপি চেয়ারম্যান মাওঃ আবুল হোসেন ও সাবেক চেয়ারম্যান মুবশি^র আলী চাচাই বলেন, বৃহস্পতিবার চতুল বাজারে পুলিশের উপর হামলার ঘটনার সাথে বাজারের কিছু ব্যবসায়ী ও উশৃঙ্খল যুবক হামলা করেছে তাদের চতুলের ৬জন ও জৈন্তাপুরের ৬জন রয়েছেন, আমরা তাদের চিহ্নিত করে সামাজিক ভাবে জরিমানা সহ অন্যান্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। কিছু লোকের কারনে চতুল এলাকার ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হউক এ ধরনের কোন কর্মকান্ডের যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেদিকে আমরা কঠোর থাকব। বিশেষ করে ঘটনার জন্য আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ না করে জড়িতদের ক্ষমা করে দেওয়ায় পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন পিপিএম এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা সুবেদার আফতাব উদ্দিন, চতুল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী ইসমাইল আলী, কানাইঘাট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন, মুরব্বী মুহিবুল হক বাবুল, ব্যবসায়ী জাহেদুল ইসলাম রুবেল, ব্যবসায়ী কমিটির সদস্য জয়নাল আবেদীন, দুলাল আহমদ প্রমুখ।
Leave a Reply