কানাইঘাট প্রতিনিধি: কানাইঘাট লোভাছড়া পাথর কোয়ারিতে শুকনো মৌসুমে উত্তলোনকৃত লক্ষ লক্ষ ঘনফুট পাথর নিয়ে অচল অবস্থার সৃষ্টি হওযায় খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (ডিএমডি) এর পরিচালক মামুনুর রশিদ ও সহকারি পরিচালক মাহফুজুর রহমান কোয়ারি এলাকা পরিদর্শন করেছেন। আজ শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১১ টার দিকে তারা কোয়ারী এলাকায় আসেন এবং নৌপথে লোভাছড়ার দু’পাড়ে মজুদকৃত পাথরের বর্তমান অবস্থা ঘুরে ঘুরে দেখেন। পরে তারা মুলাগুল পাথর ব্যবসায়ী সমিতির অফিসে যান। সেখানে পূর্ব থেকে অবস্থানরত লোভাছড়া পাথর ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলেন উন্নয়ন ব্যুরোর পরিচালক মামুনুর রশিদ ও সহকারী পরিচালক মাহফুজুর রহমান। এসময় ব্যবসায়ীরা বলেন, তারা তাদের পাথরগুলো কোয়ারির সাবেক ইজারাদার মস্তাক আহমদ পলাশের কাছ থেকে রশিদ মূলে ইজারার মেয়াদকালীন সময়ে ক্রয় করেন। কিন্তু দেশে করোনা পরিস্থিতি সে সময় মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ার কারণে এবং নৌপথে পানি কম থাকায় তারা তাদের ক্রয়কৃত লক্ষ লক্ষ ঘন ফুট পাথর বিক্রি করতে বিলম্ব হয়।
এই সুযোগে সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসক কার্যলায়ের কর্মকর্তারা সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে ও খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো কর্তৃপক্ষকে কোন ধরনের অবহিত না করে সম্পূর্ণ উদ্দ্যেশ্য প্রণোদিত ভাবে মাস খানেক পূর্বে কোয়ারির দু’পারে মজুদকৃত কোটি ঘনফুট পাথর অবৈধ পন্থায় জব্দ করে।
ব্যবসায়ীদের বৈধ ক্রয়কৃত পাথর সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তর ইতিমধ্যে পর পর ৩ দফা টেন্ডার আহবান করে নিলামে বিক্রির পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে শতশত পাথর ব্যবসায়ীরা ঋণগ্রস্ত হয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। ব্যবসায়ীরা খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর দুই কর্মকর্তার কাছে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক পাথর নিলাম প্রক্রিয়া বাতিল করে খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুারোর নীতিমালা অনুযায়ী তাদের পাথর বিক্রি ও পরিবহনের সুযোগ করে দেওয়ার দাবি জানান। পাথর ব্যবসায়ীরা প্রায় ৩’শটি আবেদন পত্র এবং উচ্চ আদালতে কয়েকজন পাথর ব্যবসায়ীর রিট পিটিশন মামলার কপি কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেন।
কোয়ারিতে পরিদর্শনে আসা খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুারোর পরিচালক মামুনুর রশীদ বলেন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তারা কোয়ারীর বর্তমান পরিস্থিতি জানার জন্য এখানে এসেছেন। পাথর ব্যবসায়ীদের কথা তারা শুনেছেন। সার্বিক পরিস্থিতি তারা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন এবং সেই আলোকে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ব্যবসায়ীরা যাতে করে ক্ষয়ক্ষতির স্বীকার না হন সে বিষয়টিও তার তুলে ধরবেন বলে জানান।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, সাবেক ইজারাদার মস্তাক আহমদ পলাশ, লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউপির চেয়ারম্যান ফয়েজ আহমদ, উপজেলা আ’লীগের সহ সভাপতি জামাল উদ্দিন, জেলা পরিষদের ১৫ ওয়ার্ড সদস্য আলমাছ উদ্দিন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শমসের আলম, উপজেলা আওয়ামীলীগের অর্থ সম্পাদক পাথর ব্যবসায়ী তমিজ উদ্দিন, লোভাছড়া আদর্শ পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন, মুলাগুল পাথর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি হাজী গিয়াস উদ্দিন, কানাইঘাট আঞ্চলিক পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল মালিক মানিক, সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, পাথর ব্যবসায়ী আব্দুল হেকিম শামিম, হাজী কামাল, আব্বাস উদ্দিন, উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক এনামুল হক, পাথর শ্রমিক সমবায় সমিতির সভাপতি আজাদুর রহমান সহ ৩টি পাথর ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ।
এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক নিলাম প্রক্রিয়া বাতিলের দাবিতে পাথর ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষনা করেছেন। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টার দিকে মুলাগুল কান্দলা নয়া বাজারে সর্বস্তরের পাথর ব্যবসায়ীদের নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিদ্ধান্তক্রমে আগামী শনিবার নয়া বাজারে মুলাগুল এলাকার সর্বস্তরের মুরব্বীদের নিয়ে এক পরামর্শ সভা, রবিবার নয়া বাজারে পাথর ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে মানববন্ধন, সোমবার অনুরূপ ভাবে মুলাগুল বাজারে মানববন্ধন, মঙ্গলবার এলাকার আলীম উলামাদের নিয়ে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল সহ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষনা করা হয়েছে বলে লোভাছড়া আদর্শ পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন জানান। নিলাম প্রক্রিয়া বাতিল না হওয়া পর্যন্ত চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে তিনি বলেন।
Leave a Reply