নবীন,নোয়াখালী প্রতিনিধিঃ নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাটে মঙ্গলবার রাতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আরও একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন। গুরুতর আহত ছাত্রলীগ নেতা জাকির হোসেনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের স্থগিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমানের (বাদল) সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
নিহত ব্যক্তির নাম আলাউদ্দিন (৩২)। তিনি উপজেলার চর ফকিরা ইউনিয়নের চর কালি গ্রামের মমিনুল হকের ছেলে। স্থানীয় সূত্রগুলো দাবি করছে, নিহত আলাউদ্দিন মিজানুর রহমানের অনুসারী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, সংঘর্ষের সময় গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সংঘর্ষের জন্য উভয় পক্ষই প্রতিপক্ষকে দায়ী করেছে। এই দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কিরের মৃত্যুর তিন সপ্তাহ পার না হতেই আবারও আরেকজন নিহত হলেন।
কাদের মির্জা ও মিজানুর রহমানের অনুসারীদের মধ্যে বিকেলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে রাতে আবার দুই পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। প্রথম সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে বসুরহাট পৌরসভার রূপালী চত্বর এলাকায়। এরপর এই সংঘর্ষের জেরে রাতে আবার সংঘর্ষে জড়ায় উভয় পক্ষ। এ সংঘর্ষে পুলিশসহ প্রায় অর্ধশত আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্র বলেছে।
গুলিবিদ্ধদের মধ্যে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন হৃদয়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। বাকি আহতদের নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাকির হোসেন, নিজাম উদ্দিন ও কনস্টেবল আলাউদ্দিন।
এ ঘটনায় বসুরহাট পৌরসভা এলাকায় বুধবার (১০ মার্চ) সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিয়াউল হক মীর।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খানের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিকালে বসুরহাট রূপালি চত্বরে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে উপজেলা আওয়ামী লীগ। এতে বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে ঝাড়ু মিছিল নিয়ে কয়েক হাজার নারী-পুরুষ ও দলীয় নেতাকর্মীরা অংশ নেন। সভার শেষ দিকে প্রতিপক্ষ গ্রুপের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে সভাস্থলের দুই দিক থেকে একযোগে হামলা চালান। এ সময় মুহুর্মুহু গুলি ও বোমার শব্দে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এদিক-ওদিক ছোটাছুটিতে ও লাঠির আঘাতে ২০-২৫ জন নারী-পুরুষ আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল। তিনি দাবি করেন, ‘মির্জা বাহিনীর ছোড়া গুলিতে চরএলাহী ইউনিয়নের আবদুর রাজ্জাক চেয়ারম্যানের ছেলে রাজুসহ (২২) অন্তত চার জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
অন্যদিকে মেয়র আবদুল কাদের মির্জা জানান, এ ঘটনার সঙ্গে তিনি বা তার লোকজন জড়িত নন। তবে, তার অন্তত ১৫-২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে বসুরহাট পৌরসভার একজন গাড়িচালক বোমায় আঘাত পেয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানা যায়, সংঘর্ষের ঘটনার পর পুলিশসহ পাঁচ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। তারা হলেন চরএলাহীর রাজিব হোসেন রাজু (২২), সালা উদ্দিন (১৮), চর কালীর হোসেন (১৮) ও আদনান শাহ (২১)।
কাদের মির্জা গ্রুপ বসুরহাট পৌরসভা চত্বরে ও মিজানুর রহমান বাদল গ্রুপ উপজেলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছে। বাজারে পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা বাহিনীর লোকজন অবস্থান নিয়েছে।
বসুরহাট থানার ওসি মীর জাহেদুল হক রনি জানান, সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ ১০-১২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় পৌরসভার দিক থেকে ছোড়া ইটের আঘাতে তিনিসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে।
Leave a Reply