নোয়াখালী প্রতিনিধিনোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চরকাঁকড়ায় ২০১১ সালের ২৭ জুলাই পুলিশের সামনে কিশোর শামছুদ্দিন মিলনকে ‘ডাকাত’ সাজিয়ে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ২৯জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছে আদালত। এ সময় পুলিশের এক এসআইসহ ২১জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। সোমবার বিকালে শুনানী শেষে জেলার ২ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক মিজানুর রহমান এ আদেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, মিলনের বাড়ি কোম্পানীগঞ্জের চর ফকিরা গ্রামে। বাবা প্রবাসী গিয়াস উদ্দিন। মিলন ২০১০ সালে স্থানীয় কবি নজরুল উচ্চবিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলেও অর্থের অভাবে এসএসসি পরীক্ষা দেয়নি। সেদিন বাবার পাঠানো ১৪ হাজার টাকা নিয়ে জমি রেজিস্ট্রির জন্য উপজেলা সদরে যাওয়ার পথে এক খালাতো বোনের সঙ্গে দেখা করতে চর কাঁকড়া ব্যাপারী স্কুলের মসজিদের ঘাটে অপেক্ষা করছিল। কিছুক্ষণ পর সেখানে ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিন ও সহযোগী মিজানুর রহমান তার পরিচয় জানতে চান। তাঁরা পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরও সঙ্গে থাকা মুঠোফোন ও নগদ টাকা ছিনিয়ে মিলনকে পুলিশে সোপর্দ করেন। পরে পুলিশ থানায় নেওয়ার পথে তাঁকে ‘ডাকাত’ সাজিয়ে টেকেরবাজারে উন্মত্ত জনতার হাতে ছেড়ে দেয়। এরপর পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতেই সমানে কিলঘুষি, লাথি ও লাঠিপেটা। উন্মত্ত জনতার পিটুনিতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ছেলেটির। আট বছর আগের এ ঘটনায় চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু এখন আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রে দেখা যাচ্ছে, পুলিশ সদস্যদের অব্যাহতি দিয়ে আসামি করা হয়েছে অন্যদের।
ঘটনার কয়েকদিন পর মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিওচিত্রে নৃশংস এই হত্যাকান্ডের খবর গণমাধ্যমে ওঠে আসে। এনিয়ে দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় উঠে। ২০১৫ সালের জুলাই মাসের প্রথম দিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নোয়াখালী জেলা পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি) ওসি আতাউর রহমান ভূঁইয়া মামলায় তদন্তে ভিডিওচিত্র দেখে হত্যার ঘটনায় সনাক্ত হওয়া ২৭ ব্যক্তি ও চার পুলিশ সদস্যসহ ৩২ জন আসামির সবাইকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে নোয়াখালীর ২ নম্বর আমলি আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল) দাখিল করেছিলেন।
পরবর্তীতে মামলাটি অধিকতর তদন্ত শেষে গত ৯ মার্চ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন আহম্মদ নোয়াখালীর ২ নম্বর আমলি আদালতে পাঁচ পৃষ্ঠার এক অভিযোগপত্র দাখিল করেন, যাতে চর কাঁকড়া ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন সদস্য জামাল উদ্দিন, তাঁর সহযোগী মিজানুর রহমান মানিকসহ ২৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনের মৃত্যু হওয়ায় তাকে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেয়া হয়। অপর দিকে ৭ জন জামিনে, আর বাকি ২০ জন পলাতক। কিন্তু এই অভিযোগপত্রেও কোনো পুলিশ সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। পরবর্তীতে ওই অভিযোগপত্র আদালত গ্রহণ করেন। যা পর্যালোচনা করে মিলন হত্যার সময় উপস্থিত থাকা পুলিশের এসআই আকরাম হোসেন শেখকে অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দেন।
Leave a Reply