বুলবুল আহমেদ, নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: তিন বছরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছয় লেন প্রকল্পের কাজ হয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ। বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশের ২১ কিলোমিটার কাজের ৯ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া ৩০ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই সময়ের মধ্যে ৯০ শতাংশ কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না। ফলে প্রকল্পের কাজ শেষ হতে ২০২৮ সাল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর সড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করার কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে ঢাকার কাঁচপুর থেকে সিলেট পর্যন্ত ২০৯ কিলোমিটার ছয় লেন এবং সিলেট থেকে তামাবিল পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার চার লেন দৃশ্যমান হওয়ার কথা ছিল। তবে বারবার নকশা পরিবর্তনসহ নানা জটিলতার কারণে প্রকল্পটি বিলম্বিত হচ্ছে।
প্রথমে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করার কথা থাকলেও পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছয় লেন এবং সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক চার লেন করা হবে। তবে জমি অধিগ্রহণ ও ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করেই ২০২১ সালে প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল, যা পরবর্তীতে কাজের ধীরগতির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক প্রকল্পটি বাংলাদেশের উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, ভুটান ও চীনের সঙ্গে সংযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলাবাসীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এই প্রকল্পের আওতায় মূল সড়কের উভয় পাশে ৫.৫ মিটার প্রশস্ত ধীরগতির যান চলাচলের জন্য পৃথক লেন থাকবে। এছাড়া ৬৬টি সেতু, ৩০৫টি কালভার্ট, ৭টি ফ্লাইওভার-ওভারপাস এবং ৬টি রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ করা হবে। বর্তমানে ঢাকা-সিলেট অংশের ১৩টি প্যাকেজের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে এবং সিলেট-তামাবিল সড়কের প্রায় ৬০ কিলোমিটার অংশের ৩টি প্যাকেজের মধ্যে একটি শেষ হয়েছে, অন্যটির কাজ চলছে। তবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ২০৯ কিলোমিটারের মধ্যে সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের ১২১ কিলোমিটার অংশের জমি এখনও অধিগ্রহণ করা হয়নি।
৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পের ৭৫ শতাংশ অর্থ দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (ADB), আর বাকি অর্থ দেবে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
Leave a Reply