দোয়ারাবাজারে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল : অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত

তাজুল ইসলাম, দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) থেকে::সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে গত তিনদিনের ভারি বর্ষণ ও মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে অর্ধ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অতিবৃষ্টি ও ঢলের তোড়ে অধিকাংশ পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে যাওয়ায় মৎস্য খামারিরা পড়েছেন বিপাকে। বর্তমান উঠতি আউশ-ইরি ফসল, সদ্য বপন করা আমনের বীজতলা ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে যাওয়াসহ গো-খাদ্য সংকটের আশংকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার শূণ্যের কোঠায় নেমে এসেছে।

উপজেলা সদরে সুরমার পানি বিপদসীমার ৫৫সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় রাস্তাঘাট তলিয়ে গিয়ে অফিসপাড়াসহ বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করছে। সুরমার পানি বৃদ্ধির ফলে খোদ উপজেলা পরিষদ ভবনের সম্মুখস্থ পাকা সড়কে ফাঁটলসহ নদীপাড় সংলগ্ন সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল মছব্বিরের ছেলেদের দু’টি দোকান অচিরেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া চেলা, মরা চেলা, চিলাই, চলতি, কালিউরি, খাসিয়ামারা, ধূমখালী ও ছাগলচোরাসহ উপজেলার সকল নদী-নালার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত উপজেলার সুরমা, বগুলা, লক্ষীপুর, নরসিংপুর, দোয়ারাবাজার সদর ছাড়াও বাকি চার ইউনিয়নের নি¤œাঞ্চল ক্রমশ প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

চিলাই নদী পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শিব্বির আকন্দ (সাব্বির) জানান, সুষ্ঠ তদারকি ও ব্যবস্থাপনার অভাবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাাচারিতায় বগুলা ইউনিয়নস্থ চিলাই নদীর বিধস্ত বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে প্রবল বেগে হু হু করে পানি ঢুকায় বিভিন্ন হাওরের শতাধিক একর আউশ-ইরি ফসল ইতিমধ্যে তলিয়ে গেছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বগুলাবাজার, ক্যাম্পেরঘাট-ইদুকোনা রাস্তা ও অধিকাংশ গ্রামের বাড়িঘরে হাটুসমান পানি থাকায় গবাদি পশুসহ জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।

উপজেলা নদীভাঙন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনিকভাবে সুষ্ঠ তদারকির অভাবে নদীভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ঢাকার ‘মেসার্স আজমেরি বিল্ডার্স’ কর্তৃক প্রথমদিকে কাজের গুণগত মান মোটামুটি ভালো হলেও শেষ পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় নির্ধারিত জিওবি ব্যাগ সঠিকভাবে না বসানোর ফলে নিয়মমাফিক ড্যাম্পিং ব্যবস্থা সম্পন্ন না হওয়াতে সরকারের কোটি কোটি টাকা জলে ভেস্তে যাচ্ছে। সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষ ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পাউবোসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরে আমি জোর দাবি জানাচ্ছি।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা বলেন. নদীভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্পের কাজে কোনোরূপ অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তা খতিয়ে দেখে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা