সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ:: ভাটিতে পানির টান না থাকা এবং গত ৪দিন ধরে ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় নদনদী, হাওর, খাল-বিলে পানি বৃদ্ধি পেয়ে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তীত রয়েছে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন দোয়ারাবাজার সদর, সুরমা, বগুলা, লক্ষীপুর, বাংলাবাজার, নরসিংপুর, দোহালিয়া, পান্ডারগাঁও ও মান্নারগাঁও ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের লাখো মানুষ।
দোয়ারাবাজার সদর, সুরমা, বগুলা ও নরসিংপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের অধিকাংশ মাছের ঘের ও পুকুরে অবমুক্ত করা মাছের পোনা দ্বিতীয় দফা বন্যায় আবারও ভেসে গেছে। অধিকাংশ বাড়িঘরে হাঁটু পানি, কোমর পানি লেগে থাকায় অনেক পরিবারের উঁনুনে হাড়িই বসছেনা। এদিকে দু’দফা বন্যায় মাঠ ও গোচারণ ভূমির ঘাস মরে যাওয়ায় গবাদি পশুপক্ষিরা আহাজারি করছে। হাজার হাজার হেক্টর উঠতি আউশ ফসলসহ সদ্য বপন করা আমনের বীজতলা আবারও বিনষ্ট হওয়ায় দিকভ্রম হয়ে পড়েছেন কৃষিজীবীরা। রাস্তাঘাটসহ অধিকাংশ হাটবাজার আবারও তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়িসহ খেটে খাওয়া মানুষসহ সব শ্রেনির লোকজন পড়েছেন চরম বিপাকে।
প্রথম দফা বন্যায় ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট দ্বিতীয় দফা বন্যার ঢলের তোড়ে বিভিন্ন ব্রিজের অ্যাপ্রোচ ধস, ফাঁটল ও ভাঙনের ফলে উপজেলা সদরের সাথে ৯টি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ একেবারেই বিচ্ছিন্ন রয়েছে। অপরদিকে বিদ্যুতের ঘনঘটা, লোডশেডিংসহ প্রায়ই একাধারে টানা ২-৩দিন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন উপজেলাবাসী। অথচ বর্তমান মহামারী করোনা সংক্রমণের সংকটকালে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গত ৪ মাস ধরে বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের তাগিদ ছাড়াও নতুন বিলের কাগজপত্র দ্বারে দ্বারে পৌছে দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। সব মিলিয়ে এ যেন ‘মরার উপর খরার ঘা’।
তাই পরপর দু’দফা বন্যায় বিপর্যয়গ্রস্ত দোয়ারাবাজার উপজেলাকে বন্যাদূর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন উপজেলাবাসী। এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় সুরমাসহ সকল নদ-নদী, হাওর, খাল-বিলের পানি হ্রাস না পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তীত রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা জানান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুর রহিম, ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামসহ প্রশাসনের বিভিন্ন কমৃকর্তারা দ্রুত এলাকাগুলো পরিদর্শন করছেন। দূর্যোগ মোকাবেলায় মনিটরিং ছাড়াও কন্ট্রোলরুম খোলা রেখে উপজেলা প্রশাসন সারাক্ষণ প্রস্তুত রয়েছে। বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হলেও করোনা সংক্রমণের আতংকে অধিকাংশ বানভাসিরা সেখানে যাচ্ছেন না। উপজেলার সকল ইউপি চেয়ারম্যানদের নিয়ে ত্রাণ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের লোকজনের মধ্যে পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট ও শুকনো খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্তের তালিকা তৈরি করতে ইতোমধ্যে সকল ইউপি চেয়ারম্যানকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
Leave a Reply