এনামুল কবির(মুন্না)দোয়ারাবাজার প্রতিনিধিঃ দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর মুহিবুর রহমান মানিক সোনালী নূর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে নূরপুরগামী কানলার হাওরের একমাত্র বোরো ফসলরক্ষা বাধঁ খ্যাত জোড়খলা আবোড়া বেড়িবাঁধের পেটফুলা নামক স্থানে স্লুইচ গেইট না থাকায় অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও হুমকির মুখে রয়েছে কয়েক শতাধিক হেক্টর বোরো ফসলি জমি। জানা যায়, বেড়িবাঁধে দীর্ঘ দিন যাবৎ স্লুইচ গেইট নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন এলাকাবাসী। কিন্তু বার বার উপেক্ষিত হাওরের বোরো চাষী ও এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের স্লুইচ গেইট নির্মাণের দাবিটি আজোবধি আলোর মুখ দেখেনি। আগাম বন্যার হাত থেকে ফসল রক্ষার্থে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে প্রতিবছরই শীতের শেষ দিকে জোড়খলা আবোড়া বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। গতবছর সোনাপুর থেকে জোড়খলা হয়ে সুলতানপুর পর্যন্ত ফসল রক্ষা বাধ নির্মাণে বরাদ্দ ধরা হয়েছিল ২০,০০,০০০ (বিশ লক্ষ) টাকা। কিন্তু ওই বছরই বন্যায় বাঁধে ভাঙ্গন সৃষ্ট হওয়ায় বাধঁটি কোনো কাজে আসেনি হাওরের কৃষকদের। এবছর একই বাঁধের ভাঙ্গন রোধকল্পে ও পূনরাকৃতিকরণ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩,৮৩,৭৩০ (তেরো লক্ষ তিরাশি হাজার সাতশত তিরিশ) টাকা। স্লুইচ গেইট না থাকায় এবারো বাধঁটি বিফলে যাবে এমনটাই আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাওর এলাকার বিরূপ প্রকৃতি এবং ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে পাউবোর নির্মিত বেড়িবাঁধ বার বার ভাঙন সৃষ্ট হওয়ায় বাঁধটি কোনো কাজে আসছেনা হাওরের বোরো চাষীদের। উল্টো প্রতি বছর বেড়িবাঁধ ভাঙ্গন সৃষ্ট মাটিতে বোরো ফসলি জমি ভরাট হয়ে যাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে হাওরের বোরো চাষ। এই বেড়িবাঁধে স্লুইচ গেইট না থাকায় শুধু বোরো ফলসই নয় আশপাশের ৫টি গ্রাম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ গ্রামের প্রধান সড়কগুলো প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে অরক্ষিত হয়ে পড়ে। পাহাড়ি ঢলে উজান থেকে ধেয়ে আসা খাসিয়ামারা নদীতে সৃষ্ট আগাম বন্যায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে আশাপাশের গ্রামগুলো প্রতিবছরই প্লাবিত হয়। ফলে বন্যা প্রতিরোধে বাঁধ কাজে না আসায় প্রতিবছরই বাঁধ নির্মাণে একদিকে সরকারের মোটা অঙ্কের টাকা অপচয় হচ্ছে অপরদিকে কৃষকসহ হাওরের আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত। এদিকে বার বার বাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে বাঁধের আশপাশের জমিতে মাটি সংকুলান না হওয়ায় দেখা দিয়েছে মাটি সংকট। মাটি সংকটের কারণে এবার জোড়খলা আবোড়া বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ ধীরগতিতে এগোচ্ছে। এখানে স্লুইচ গেইটের দাবিতে স্থানীয় এলাকাবাসী, কৃষক ও শিক্ষার্থীরা একাধিক বার মানববন্ধন, সভা-সমাবেশসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধির নিকট দারস্থ হলেও এখনো পর্যন্ত কোনো ধরনের কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। জানা যায়, গত বছর সরেজমিনে বাঁধ পরিদর্শনে এসে তৎকালীন জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম এখানে স্লুইচ গেইট নির্মাণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত তিনি পদোন্নতিতে অন্যত্র বদলি হয়ে যাওয়ায় এই বিষয়টি আর আলোর মুখ দেখেনি।এব্যাপারে হাওরের মৎস্য খামারি ও বোরো চাষী আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমরা দায়সারা বেড়ি বাঁধ চাইনা। স্লুইচ গেইট না থাকায় প্রতিবছর আগাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। বোরো ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হচ্ছেনা। হাওরের মৎস্য খামার অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। আমাদের সার্বিক প্রয়োজনীয় বিবেচনার্থে অভিলম্বে জোড়খলা আবোড়া বেড়িবাঁধে স্লুইচ গেইট নির্মাণ করা হোক।’ ইউপি সদস্য আলীনূর ও আব্দুল কাদির বলেন, ‘আমরা বার বার এখানে স্লুইচ গেইট নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছি। স্লুইচ গেইট না থাকায় এই বাঁধ আশপাশের এলাকার কোনো কাজে আসছেনা। মাটি সংকটের কারণ এবার বাধ পূনঃনির্মাণ কাজ ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ হয়ে দাড়িয়েছে।’ মুহিবুর রহমান মানিক সোনালী নূর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূরুল ইসলাম বলেন, ‘বেড়িবাঁধে স্লুইচ গেইট না থাকায় বর্ষা মৌসুমে আগাম বন্যায় রাস্তাঘাট প্লাবিত থাকে দীর্ঘদিন। এসময় নূরপুর, সোনাপুর, নন্দীগ্রামের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে পারেনা। এতে ওই এলাকার শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটে। বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্রতিবছরই হাইস্কুল সহ বিদ্যালয়ের যাতায়াতের প্রধান সড়ক অরক্ষিত হয়ে পড়ে। তাই এখানে স্লুইচ গেইট দেওয়া জরুরি হয়ে দাড়িয়েছে।’ মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে এব্যাপারে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মহুয়া মমতাজ জানান, ‘জোড়খলা আবোড়া বেড়িবাঁধে স্লুইচ গেইট নির্মাণের বিষয়ে গতবছরই একটি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। এটি এখনো অনুমোদিত হয়নি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে প্রস্তাবনা আকারেই আছে। যেকারণে এবারও বাঁধের পুনর্নির্মাণ কাজ হয়েছে।
Leave a Reply