নবীগঞ্জে একদিনে দুই প্রবাসীর মৃত্যু, স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় শোকস্তব্ধ জনপদ

ডেস্ক রিপোর্ট :: স্বপ্ন ছিল পরিশ্রম আর ত্যাগের বিনিময়ে পরিবারের মুখে হাসি ফোটাবেন,এই আশাতেই বিদেশ পাড়ি দিয়েছিলেন নবীগঞ্জের দুই তরুণ। কিন্তু সব আশা-ভরসা আর সংগ্রামের ইতি টেনে একদিনেই তারা দুজনেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন। একদিকে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের বেডে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই, অন্যদিকে হৃদরোগে আকস্মিক মৃত্যুর ছোবল,ফিরে এল না তাদের জীবন আর।
নিহতরা হলেন নবীগঞ্জ উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের এনাতাবাদ সর্দার বাড়ির মৃত গেদা মিয়ার পুত্র সোফায়েল আহমেদ (৩৫) এবং বাউশা ইউনিয়নের হরিধরপুর গ্রামের নানু মিয়ার পুত্র রিপন মিয়া (২৫)।
পারিবারিক সূত্র জানায়,সোফায়েল আহমেদ প্রায় এক যুগ আগে পর্তুগাল যান। পরবর্তীতে রেসিডেন্স কার্ড পেয়ে স্ত্রীসহ স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন আয়ারল্যান্ডে। বিদেশের মাটিতে গড়ে তুলেছিলেন একটি ছোট ব্যবসাও। কিন্তু কিছুদিন আগে হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। দীর্ঘ এক সপ্তাহ লাইফ সাপোর্টে থাকার পর গত শনিবার (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায়) তার মৃত্যু হয়। তার স্ত্রী গর্ভবতী বলে জানিয়েছে পরিবার।
তার চাচাতো ভাই নবীগঞ্জ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কালা মিটু বলেন, সে নিজের স্বপ্নকে ত্যাগ করে পরিবারের জন্য জীবন কাটিয়েছে। কত কষ্ট করেছে। আজ সেই কষ্টগুলোই স্মৃতি হয়ে গেল। তার মৃত্যু আমাদের কাছে এক অপূরণীয় ক্ষতি।
অপরদিকে, সৌদি আরবে গাড়ি চালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন রিপন মিয়া। কর্মব্যস্ত জীবনের মধ্যেই গত ২৪ মে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বয়স মাত্র ২৫ বছর। এত অল্প বয়সে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়া সহজ নয়।পরিবারের কাছে এটা যেন আকাশ ভেঙে পড়ার মতো খবর।
বাউশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাদিকুর রহমান শিশু জানান, আমার ইউনিয়নের একজন প্রবাসী তরুণ সৌদি আরবে মৃত্যুবরণ করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে লাশ দেশে আনার প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করছি। দুজনের মরদেহই দেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে।
নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমীন বলেন, বিষয়টি শুনেছি, তবে এখনো কেউ অফিসে যোগাযোগ করেননি। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।
একই দিনে দুটি তরতাজা প্রাণ ঝরে যাওয়ার ঘটনায় শোকাচ্ছন্ন পুরো নবীগঞ্জ। পরিবারের স্বপ্ন পূরণের জন্য দু’জনেই গিয়েছিলেন বিদেশে। তারা ভেবেছিলেন, একদিন ফিরবেন সাফল্য নিয়ে, মুখভরা হাসি আর গল্প নিয়ে। কিন্তু ভাগ্য তাদের ফিরিয়ে আনছে নিথর দেহ হয়ে, বুকভাঙা কান্না হয়ে। এই মৃত্যু শুধু দুটি পরিবার নয়, পুরো উপজেলার জনপদকে করেছে শোকে নিমজ্জিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা