দীর্ঘদিনের অভিযোগঃ নবীগঞ্জে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে পৌর এলাকাসহ উপজেলার ৩৫৪ গ্রামের সাধারণ মানুষ অন্ধকারে প্রচন্ড দাবদাহে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। গ্রাহকদের কোনোরকম অবগতি ও নোটিশ ছাড়াই সারাদিন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে রাখা হয়। এতে রাতেও অন্ধকারে ভুতুড়ে পরিবেশে বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হচ্ছে এ উপজেলার মানুষকে। এর মধ্যে সামান্য ঝড়-বৃষ্টি হলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়। অনেক সময় এক রাতে বিদ্যুৎ গেলে পরের রাতেও অনেক এলাকায় বিদ্যুতের খোঁজ মেলে না।
চলতি সপ্তাহেও ঝড়ের কারণে পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন পৌর এলাকা, শহরসহ উপজেলা বিভিন্ন গ্রামে প্রায় চার দিন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। এ এলাকার বিভিন্ন কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিপণী বিতাণসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটে মোবাইল নেটওয়ার্কও ব্যাহত হয়।
নানা সমস্যার বেড়াজালে নবীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিসের বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। বিগত তিন/চার বছর যাবৎ লাইন মেরামত করার অজুহাতে সপ্তাহে ২ দিন (শুক্রবার ও শনিবার) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হততো। কিন্তু কোনো কোনো দিন রাত ১০টাও হয় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হতে।
সচেতন মহল মনে করেন নবীগঞ্জের প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাস ও বিদ্যুৎ নিয়ে নবীগঞ্জবাসীকে অন্ধকারে রেখে দেশের মানুষকে আলোকিত করা হচ্ছে। এসব কারণে বিবিয়ানা গ্রিড সাবস্টেশন ও আউশকান্দি বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র স্থাপন কার্যক্রম শেষে দ্রুত চালু করা জরুরি।
নবীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের তথ্য মতে, নবীগঞ্জের গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য শাহজীবাজার গ্রিড থেকে ৫৪ কি.মি. দূরে ৩৩ কেভি বৈদ্যুতিক লাইনের মাধ্যমে নবীগঞ্জ উপজেলায় স্থাপিত ২০ এমভিএ বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। একই লাইনের মাধ্যমে নবীগঞ্জ, শায়েস্তাগঞ্জ, আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচং সাবস্টেশনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। আন্ডার সাইজের একই লাইনে ৪ উপজেলায় সংযোগ দেয়ায় ঘন ঘন বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায়। ৪ উপজেলার এক লাইন হওয়ায় যে কোনো এক উপজেলায় কোনো সমস্যা হলে একযোগে ৪ উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয়।
সম্প্রতি কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে নবীগঞ্জ উপজেলাজুড়ে রাস্তায় পড়ে রয়েছে অসংখ্য গাছ এবং উপড়ে গেছে বৈদ্যুতিক খুঁটি। ৩৩ কেভি লাইনের অনেক খুটি গোড়া থেকে ভেঙ্গে পড়েছে এবং কয়েকটি খুটি বিপদজনকভাবে হেলে পড়েছে। এ কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল।
এদিকে বিদ্যুৎ না থাকলে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে যায়। অপারেটররা ৩/৪ ঘণ্টা পর্যন্ত নিজেদের ব্যবস্থায় নেটওয়ার্ক চালাতে পারে, কিন্তু এর বেশি হলে সাইট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এতেও দেখা দেয় চরম ভোগান্তি। মানুষের মোবাইল ফোনের মাধ্যমের যোগাযোগও বন্ধ হয়ে যায়। এতে চরম দুঃচিন্তায় পড়েন প্রবাসে থাকা স্বজনরা।
প্রবাসী সাংবাদিক মতিউর রহমান মুন্না জানান, ‘প্রতিদিন নয়, প্রতিমুহূর্তে দুঃসংবাদ আসছে। করোনাভাইরাস প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জীবন তছনছ করে দিয়েছে। কেউ কেউ আক্রান্ত স্বজনদের জন্য হাসপাতালে ছোটাছুটি করছেন। অন্যদিকে প্রবাসে থাকা প্রবাসীরা চিন্তায় থাকেন দেশের স্বজনদের নিয়ে। প্রতিদিন দেশে স্বজনদের সাথে কথা বলতে হয়। কিন্তু বিদ্যুতের কারণে ইদানিং চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করা নবীগঞ্জের প্রবাসী ও দেশে থাকা তাদের স্বজনদের। ইদানিং একটু ঝড় তুফান হলেই ৪/৫ দিনের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। আর বিদ্যুৎ বন্ধ হলে বন্ধ হয় মোবাইল নেটওয়ার্কও। দেশে কথা বলতে চাইলে প্রচণ্ড পরিমাণে কলড্রপ হয়। জরুরী কাজে একটা ফোনে বার বার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। কখনও আবার যোগাযোগ করাও সম্ভব হয়না। ডিজিটাল বাংলাদেশে এমন ঘটনা দুঃখজনক। এজন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
Leave a Reply