বুলবুল আহমদ, নবীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আউশকান্দি শহীদ কিরবিয়া চত্ত্বরের দুই পাশের প্রায় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলা অভিযানে বুলডোজার দিয়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।
জানাযায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের চারলেন কাজ চলতি বছর থেকে শুরু হয়েছে। একারণে মহা সড়কের দু’পাশে বিভিন্ন পয়েন্টে ভেঙ্গেঁর ছাতার মতো টিনসেট-ঘর, টং, যাত্রী ছাউনি দখল করে ব্যবসা, রাস্তা বন্ধ করে প্রতিবন্ধকতা সহ অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। তাছাড়া ফুটপাতে জনসাধারন চলাচলের পথে বিভিন্ন মালামাল রেখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এসব দখলদারিত্বের কারণে সৃষ্ট যানজটে দুর্ভোগ পোহাতে হয় দূরপাল্লার পরিবহনসহ সাধারণ যাত্রীদের। প্রায় সময় ঘটছে ছোট-বড় নানান দুর্ঘটনা। র্দীর্ঘদিন ধরে মহাসড়কের পাশে গড়ে উঠা এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি করে আসছেন স্থানীয় বাসিন্ধাসহ পথচারিরা।
হবিগঞ্জের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাহিদুল হাসান চৌধুরীর ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে এ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চলে। এসময় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহি প্রকৌশলী মোঃ জহিরুল ইসলাম, নবীগঞ্জ থানা পুলিশ ও গোপলার বাজার ফাড়িঁর অসংখ্য পুলিশ, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি সহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জহিরুল ইসলাম এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, উচ্ছেদ অভিযানের পূর্বে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য নোটিশ ও মাইকিং করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের নোর্টিশ ও মাইকিং করার পরও দখলদাররা কোন কর্ণাপাত করেনি। তাই এগুলো ভেঙে ফেলা হচ্ছে। সেই সাথে আবারও যাতে করে এসব অবৈধ স্থাপনা বসানো না হয় সেজন্য হুশিয়ারিও দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এ অভিযান আমাদের নিয়মিত চলবে। মহাড়কের উন্নয়নের লক্ষে সড়কের দু’পাশের অবৈধ দোকানপাটও অন্যান্য স্থাপনার ময়লা আবর্জনাগুলো মহাসড়কের পাশে ফেলে আবর্জনার স্থুপ সৃষ্টি হচ্ছে। এতে মহাসড়কের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এছাড়াও অবৈধ দখলদাররা সড়কের দু’পাশ দখলে নেয়ার কারণে সড়কের দু’পাশের খোলা জায়গা কমে যাচ্ছে। এর কারণে মহসড়কের বিভিন্ন রাস্তার পাশে পরিবহনগুলো দাঁড় করাতে পারছেন না। দিন দিন দখলদারদের সংখ্যা বাড়েই উটছে। এ অবস্থায় আমরা নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান করে যাচ্ছি।
উচ্ছেদ চলাকালিন সময়ে শাকিল রেষ্টুরেন্টের সামন ভাঙ্গার সময় নবীগঞ্জ উপজেলার ১০নং দেবপাড়া ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামের কাঠ মেস্তুরী জুয়েল মিয়া ও পল্লিবিদ্যুৎতের জনৈক এক কর্মকর্তা সহ ৩জন গুরুত্বর আহত হয়েছেন। অভিযানের সময় ঐ মেস্তুরী সহ অন্যান্যরা বিল্ডিংয়ের নিচে দাড়িয়ে ছিলেন। পুলিশ বাশিঁর সুর দিয়েও কিছু উৎসুক জনতা ও দোকান পাটের মালিকরা ভীড় জমান। এমনতাবস্থায় ১জনের মাথায়, ১জনের হাতে ও আরেকজনের পায়ে প্রচন্ড আঘাতপ্রাপ্ত হন। এতে তারা অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরন করেন।
এদিকে, ভ্রাম্যমান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাহিদুল হাসান চৌধুরী ও সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহি প্রকৌশলী মোঃ জহিরুল ইসলাম এর কাছে গিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী, ডাক্তার, শিক্ষার্থী সহ আরো অনেকেই দাবী করে বলেন, এখানে রয়েছে, এশিয়ার বৃহত্তম বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড, সিলেট বিভাগের মধ্যে একমাত্র গার্মেস্ শিল্প জে.আই.সি স্যাুট লিমিটেড, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, এতিমখানা সহ সরকারী- বেসরকী বিভিন্ন প্রতিষ্টান। কিন্তু অবৈধ দখলদারদের কারণে ফুটফাতে কোন প্রকার লোকজন চলাফিরা করতে পারেনা। বিশেষ করে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কিন্ডার গার্ডেন ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের চরম দূর্ভোগ পুহাতে হয়।
জানাযায়, শুরু হয়ে গেছে ঢাকা-সিলেট চারলেন মহাসড়কের কাজ। চীনেড়ুর অর্থায়নে জিটুজি ভিত্তিতে চার লেনের মহাসড়কের কাজ শুরু হয়ে গেছে। দুই বছর মেয়াদি বিনিয়োগ প্রকল্পটি সহজ করা ও দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সরকারি অর্থে আগেই জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে জমির সঠিক মূল্য নির্ধারণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে এনজিও নিয়োগ সহ জমি অধিগ্রহণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
মহাসড়কটির দৈর্ঘ্য ২৮২ দশমিক ১২ কিলোমিটার। এর উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেনসহ চার লেনে উন্নীত করা হবে। এজন্য ভূমির প্রয়োজন হবে ৯৯০ দশমিক ২৭ একর বা ৪০০ দশমিক ৯২ হেক্টর। ডিপিপিতে ৯৯০ দশমিক ২৭ একর জমি অধিগ্রহণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৭৪৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। আর ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া পরিষেবা সংযোগ লাইন স্থানাস্তরে ব্যয় ধরা হয়েছে আরও ৪৫০ কোটি টাকা। এর বাইরে ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সি ৯১ কোটি ১৮ ও প্রাইস কন্টিনজেন্সি ৩৬৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ব্যয় হবে পাঁচ হাজার ১৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। দুই বছর মেয়াদি বিনিয়োগ প্রকল্পটির কাজ এ বছর থেকে শুরু হয়ে গেছে।
Leave a Reply