নবীগঞ্জে বন্যা কুশিয়ারা ডাইক ভেঙ্গে পানি আসছে। ৪টি উপজেলার ৫০ টি গ্রাম প্লাবিত

নবীগঞ্জ(হবিগঞ্জ)থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা:হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ কুশিয়ারা ডাইক গতকাল রবিবার বিকাল সাড়ে তিন টার দিকে ভেঙ্গে গেছে। ডাইকের জামারগাও রাধাপুর জামে মসজিদের কাছে ভেঙ্গে ডাইক ভেঙ্গে নবীগঞ্জ উপজেলার ৫০টি গ্রাম তলিয়ে গেছে এবং তিনটি হাওরের কয়েক হাজার একর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। এই ডাইকটি ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে হবিগঞ্জের তিনটি উপজেলা নবীগঞ্জ,বাহুবল,বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জের ভাটি এলাকা আক্রান্ত হবে। রাতের মধ্যে কয়েক হাজার বাড়ি ঘর তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনেরর পক্ষ থেকে বাঁধ মেরামতের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে বন্যার পানি বৃদ্ধি থাকায় এ বাঁধ মেরামত করা সম্ভব নয় বলে উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙ্গে বন্যার অবনতি হয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ৫০ টি গ্রামের মানুষ পানিবন্ধি হয়ে পড়েছেন। এখনো কোন সরকারী কোন ত্রান এলাকায় পৌছেনি। পানি বন্ধি মানুষ চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এছাড়া ইনাতগঞ্জ ও দীঘলবাক বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাইমারী স্কুলে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় কয়েক হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে গতকাল রবিবার সকালে বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্টে পানি প্রবেশ করেছে ঐ এলাকার পাঁচটি গ্রাম তলিয়ে গেছে।
র্বর্তমানে নবীগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা, বিজনা ও বরাক নদীর পানি বিপদসীমার ৫২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করছে। বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে হবিগঞ্জ জেলার সর্বত্র তিব্র আতংক উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মনে । এরই মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তৌহিদ বিন হাসান তার কার্যালয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ কন্টোলরুম খুলেছেন। তিনি বলেন ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ মেরামতের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্বক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। পানির প্রবল ¯্রােত থাকায় বাঁধ মেরামত করা যাচ্ছে না।

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানাযায়, রবিবার(১৪জুলাই) বিকাল সাড়ে ৪টায় নবীগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রবিবার বিকাল ৪টা থেকে কুশিয়ারা ডাইকে মেরামতের কাজ পুনরায় শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড । কুশিয়ারা ডাইক ভেঙ্গে নবীগঞ্জ উপজেলার, রাজের বন্ধ, জোয়াল ভাঙ্গা হাওর, বেলি বিল, বড় হাওর, ঘুঙ্গিয়াজুরি হাওরের প্রায় ১০ হাজার একর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। পানি তীব্র আকারে বৃদ্ধি পেয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
পানি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ইতোমধ্যে উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের বনগাও, পারকুল, ঢালার পাড়, ব্রাণ¥ন গ্রাম, পাহাড় পুর সহ ১৫টি গ্রাম ও ইসলামপুর এবং দীঘলবাক ইউনিয়নের দীঘলবাক, কসবা, কুমারকাঁদা, ফাদুল্লা,রাধাপুর, দুর্গাপুর, জামারগাঁও সহ ২০টি গ্রাম বন্যার পানিতে আক্রান্ত এবং ইনাত গঞ্জ ইউনিয়নের বিবিয়ানা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ইউনিয়নে ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।, ইনাতগঞ্জ বাজারের পার্শবর্তী উমরপুর, ইনাতগঞ্জের বাজারের ছড়া, পুর্ববাজার কলনী, চন্ডিপুর, বটপারা, বাউরকাপন, মোকামপারা, রাজনগর.মোস্থফাপুর,লালাপুর,প্রজাতপুর,দক্ষিনগ্রাম,পাঠানহাটি,তপথিবাগসহ আশ পাশের শত শত গরীব পরিবারের বাড়ি ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। গরীব অসহায়দের সাহায্যার্তে ঐ ওয়ার্ডে মেম্বার আজির উদ্দিন আরজু সংশ্লিষ্ট উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সু দৃষ্টি কামনা করেছেন। এসব এলাকার বাড়ি-ঘরে পানি উঠায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেকেই।তাছাড়া ইনাতগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে পানি প্রবেশ করায় দুর্ভোগে পড়েছেন পুলিশ সদস্যরা। র্
কুশিয়ারা ডাইক ভেঙে যাওয়ার ফলে বিবিয়ানা পাওয়ার প্ল­ান্ট ও বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড পানি প্রবেশ করে বৃহৎ ক্ষতির আশংকা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
দীঘলবাক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সাইদ এওলা বলেন, আমরা সারারাত পাহাড়া দিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ রক্ষায় থাকলেও বিকালে হঠাৎ করে বিকট শব্দ হয়ে প্রায় ১০০ হাত জায়গা নিয়ে ভেঙ্গে যায়। ভাঙ্গন বৃদ্ধি পাচ্ছে রাতের মধ্যে ভাঙ্গন বিশাল আকার ধারন করবে। আমার মনে হয় বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বাঁধ মেরামত করা সম্ভব নয়। আমার ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রাম বন্যার পানিতে আক্রান্ত হয়েছে।
আউশকান্দি ইউপির চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান হারুন, বলেন, কুশিয়ারা ডাইক ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে তার ইউনিয়নেন প্রায় ২০ টি গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। জোয়াল ভাঙ্গা হাওর, বেলী বিলের হাওরে কয়েক হাজার একর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। রাতের বেলা পানি বৃদ্ধি পেয়ে কি হবে আল্লাহ ভাল জানেন। এখনো সরকারী ত্রান সামগ্রী তার ঐ এলাকায় পৌছেনি বলে জানান।

এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ-বিন হাসান জানান, প্রতি ঘন্টায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা আশংকা করছি কুশিয়ারা ডাইক ভেঙ্গে গেছে তাই এটা মেরামত করা হচ্ছে। বিশেষ কওে আউশকান্দি, ইনাতগঞ্জ ও দীঘলবাক ইউনিয়ন বেশি আক্রান্ত হয়েছে।ইতোমধ্যে উপজেলায় একটি কন্ট্রোল রুম খুলেছি। জরুরী প্রয়োজনে সার্বক্ষণিক হট লাইন নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারবেন পানিবন্দি লোকজন । তিনি আরো বলেন, কুশিয়ারা ডাইক হঠাৎ করে ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে কয়েকটি হাওরের কয়েক হাজার একর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।

হবিগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তাওহীদুল ইসলাম ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী এম,এল সৈকত বলেন, বিকাল সাড়ে ৪টায় কুশিয়ারা নদীর পানি বর্তমানে বিপদসীমার ৫৩ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভেঙ্গে যাওয়া কুশিয়ারা ডাইকে মেরামতের জন্য আমাদের লোকজন কাজ করছে। ভাঙন রোধে ইতোমধ্যে আমরা বস্তা ফেলে ভাঙন টেকাতে জোরালো ভাবে কাজ করে যাচ্ছি । তিনি বলেন, সময় যত যাচ্ছে পানি বাড়ছে,আজ পানি কমার কোনো সম্ভবনা নেই । তবে বিবিয়ানা পাওয়ার ও বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ডের নীচু এলাকায় পানি প্রবেশ করলেও মুল যন্ত্রপাতি নিরাপদে কোন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। বিকেলে ভাঙ্গনকৃত কুশিয়ারা ডাইক পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় স্থানীয় সংসদ সদস্য গাজী শাহ নেওয়াজ মিলাদ গাজী,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ-বিন হাসান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা