নবীগঞ্জ প্রতিনিধি: নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন সরকারী কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও সিনিয়র সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে মানহানীকর মিথ্যা স্ট্যাটাস এবং বিভিন্ন ভূয়া একাউন্ট খোলে প্রতারণার অভিযোগে ফরজুন আক্তার মনি নামের এক প্রতারক নারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গতকাল রবিবার বিকেলে শহরতলীর জে.কে উচ্চ বিদ্যালয় পয়েন্ট থেকে নবীগঞ্জ থানার একদল পুলিশ ডিজিটাল নিরাপত্তা ও তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলায় গ্রেফতার করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, ওই নারী দীর্ঘদিন যাবত নিজেকে সাংবাদিক ও মানবাধীকার কর্মী পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজনের সাথে প্রতারণা করে আসছিল।
তার টার্গেট ছিল- নারী জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা ও স্কুল-কলেজের ছাত্রী। প্রতি রাতেই নারীদের বিভিন্ন অশালীন ম্যাসেজ দিতো। এসব ম্যাসেজের স্ক্রীণশর্ট প্রকাশ হওয়ায় মনি নারী না পুরুষ এনিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রতারক মনির এই প্রতারণার ফাঁদে পড়ে কেউ প্রতিবাদ করলেই মনি তার ফেইসবুক আইডিতে বিভিন্ন রকম হুমকি ধামকিমূলক ও মানহানীকর স্ট্যাটাস পোস্ট দিয়ে অপদস্ত করতো।
অভিযোগ রয়েছে- বহু রূপের অধিকারী মনি বিশেষ করে নিজেকে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার আত্মীয় এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যের মেয়ে আবার অনেককে ভাতিজি পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করতো। কিছুদিন পূর্বে নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সমকাল প্রতিনিধি এম এ আহমদ আজাদ ও সাংবাদিক এম মুজিবুর রহমান এর বিরুদ্ধে তার ফেইসবুক আইডিতে একাধিক মানহানীকর স্ট্যাটাস দিলে সংবাদিক আজাদ বাদী হয়ে পুলিশ ডিজিটাল নিরাপত্তা ও তথ্য প্রযুক্তি আইনে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ উক্ত অভিযোগের সত্যতা পেলে গতকাল রবিবার বিকেলে থানার এসআই শামসুল ইসলাম, এসআই শমীরণ দাশের নেতৃত্বে একদল পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এসময় তার কাছ থেকে ২টি এনআইডি কার্ড, বেশ কিছু ভূয়া আইডি কার্ড, ৩টি মোবাইল ফোন, ১০ টি সিম কার্ড, একটি কলম ক্যামেরাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গ্রেফতারকৃত মনির বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। অনেক সম্মানীত ব্যক্তি ও সুশীল সমাজ এবং সরকারী কর্মকর্তাদের সম্মানহানী করেছে ফেসবুকে। ওসি আরো বলেন- নবীগঞ্জে অনেক ভূয়া সাংবাদিক রয়েছে। তারা সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে নানা অপকর্ম করছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, প্রতারক ফয়জুন আক্তার মনি পুরুষ সেজে নবীগঞ্জের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা বেগম ও সাবেক মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সেলিনা পারভিন এবং বিভিন্ন নারী ইউপি সদস্যসহ আরও অনেককে অশ্লীল ম্যাসেজ পাঠিয়ে যৌন হয়রানি করে আসছিল। সে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে অনেকের সাথে সংখ্যতা গড়ে তোলে। পরবর্তীতে তাদেরকে যৌন হয়রানী করতো। বিশেষ করে প্রবাসীদের বিভিন্ন ম্যাসেজ দিয়ে নানান উপহার সামগ্রী হাতিয়ে নিতো। এ বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক আজাদ কিছুদিন পূর্বে মনিকে ডেকে বিষয়গুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন এবং এ ধরনের কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার জন্য পরামর্শ দেন। এতে সে ক্ষুব্ধ হয়ে সাংবাদিক আজাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। মনি সাংবাদিক আজাদের বিরুদ্ধে তার ফেইসবুক আইডিতে নানারকম মানহানিকর স্ট্যাটাস দিয়ে তার ও তার পরিবারের মান সম্মান হানি করে আসছিল।
অনেকেই জানান- ফরজুন আক্তার মনি বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন নাম ব্যবহার করে প্রতারণা করতো এবং এমন কী ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের শীর্ষ নেতা ও প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করছিল। দাদন ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল। এর ফলে অল্প সময়ে সে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যায়।
তার নানা অপকর্মের বিষয় মানুষ জানলেও তার এসব পরিচয়ের কারনে ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস করতেন না। অবশেষে নানা অপকর্মের হুতা ও একই অঙ্গে বহুরূপী ফয়জুন আক্তার মনি পুলিশের খাচাঁয় বন্দি হওয়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেইসবুকেও অনেকই আনন্দ উল্লাস করে পোস্ট দিতে দেখা গেছে।
Leave a Reply