আলী জাবেদ মান্না, নবীগঞ্জ প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ শহরতলীতে শাখা-বরাক নদীতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের দ্বিতীয় দিন গতকাল বুধবার দিন ব্যাপী শহরে চলছে অভিযান নিয়ে বিতর্কের ঝড়। আর বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে পুর্বের দেয়া মাপজোক করে দেয়া লাল দাগ মুছে ফেলার কারনে। ফলে রহস্য ঘণিভুত হচ্ছে অভিযানে অংশ নেয়া সংশ্লিষ্টদের প্রতি। এদিকে সদর ইউনিয়ন ভুমি অফিসের সহকারী তহশীলদার এবং ৩ সার্ভেয়ারের দিকে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। ওরা স্থানীয় খাল সংলগ্ন এক মার্কেট থেকে কয়েক লক্ষাধিক টাকা বানিজ্যের গুঞ্জন উঠেছে। স্থানীয় লোকজন ও সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানাযায়, প্রায় ২০ কিঃ মিঃ জুড়ে শাখা বরাক নদীর খনন কাজ সামনে রেখে নদী ও খালে অবস্থানরত অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযানের সিদ্ধান্ত হয়। এরই প্রেক্ষিতে উচ্ছেদ অভিযানের পুর্বে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর সার্ভেয়ার, নবীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর সার্ভেয়ার এবং নবীগঞ্জ পৌরসভার সার্ভেয়ার মিলে মাপজোক করে লাল দাগ দিয়ে চিহ্নিত করেন অবৈধ স্থাপনা গুলো। ফলে তালিকা প্রণয়ন ও উচ্ছেদের তালিকা প্রকাশ করা হয় হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কর্তৃক এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে। তালিকা অনুযায়ী শাখা-বরাক নদীতে নির্মাণকৃত ১শ ১টি অবৈধ বাড়ি দোকান পাটসহ স্থাপনা রয়েছে। নবীগঞ্জ উপজেলার হাট নবীগঞ্জ, শিবপাশা ও রিফাতপুর মৌজায় অন্তর্গত শাখা বরাক নদীর তীরবর্তী চরগাঁও ব্রীজ হতে রিফাতপুর, বরাকনগর এলাকায় অবৈধ বসবাসকারীদের সরকারী ভূমিতে অবৈধভাবে গড়ে উঠা বসত বাড়ী/দোকানভিট নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এ তালিকায় ৩৫ নং ক্রমিকে রয়েছে শহরের গণপাঠাগার সংলগ্ন নুরানী মার্কেট। ইতিপুর্বে দেয়া হয়েছিল লাল দাগ। ওই তালিকা নিয়ে গত মঙ্গলবার শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান। চরগাওঁ ব্রীজের মুখ থেকে শুরু হয় অভিযান। ভাঙ্গা শুরুতেই পৌরসভার ২টি স্থাপনা, অনেকের বহুতল ভবনের অংশ বিশেষ ভেঙ্গে ফেলা হয়। কিন্তু গতকাল বুধবার ২য় দিনের অভিযানে নামার পরই শুরু হয় বিতর্ক। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সার্ভেয়ার তুহিন রেজা, জেল প্রশাসক অফিসের সার্ভেয়ার মোঃ শাহীন আলম ও নবীগঞ্জ পৌর সভার সার্ভেয়ার সোহাগ হোসেন মিলে পুণরায়ঃ মাপজোকের নামে নাঠকীয়তার সৃষ্টি করেন। ওই ৩ সার্ভেয়ার মিলে নুরানী মার্কেটের মধ্যভাগে দেয়া পুর্বের লাল দাগ মুছে ফেলেন। এ ঘটনায় শহর জুড়ে আলোচনা ঝড় উঠে। একটি সুত্রে জানাযায়, ওই ৩ সার্ভেয়ার এবং স্থানীয় সদর ইউনিয়ন ভুমি অফিসের সহকারী তহশীলদার আবিদ আলীকে নুরানী মাকের্টের ব্যবসায়ীরা দোকান প্রতি ৫ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে। ওই মার্কেটে দোকান রয়েছে প্রায় ৪০ টি। এ ব্যাপারে সার্ভেয়ারদের সাথে আলাপ করলে তারা জানান, মাপে ভুল হতে পারে। প্রথমে এসএ ম্যাপ দিয়ে মাপজোক করলে ওই খাল দেখা গেছে ২৬ ফুট। বর্তমানে আরএস ম্যাপ দিয়ে মাপজোক করে দেখা যায় খালের অবস্থান ১৭ ফুট। ফলে পুর্বের লাল দাগ মুছে দেয়া হয়েছে। তাহলে যে সব স্থানে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়েছে তা কি আরএস দিয়ে পুণরায় মাপজোক হবে কি না, এমন প্রশ্নের কোন জবাব দিতে পারেন নি সার্ভেয়াররা। এদিকে অভিযানের শুরুর দিনে যাদের স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে তাদের দাবী, এসএ ম্যাপের পুর্বের মাপ যদি (নুরানী মার্কেট এলাকায়) ভুল হয়ে থাকে তাহলে তাদের বাসাবাড়ির মাপঝোগও ভুল হতে পারে। আরএস ম্যাপ দিয়ে মাপজোক করলে পুরো নদী এলাকাই আরএস ম্যাপে মাপজোক করা হউক। আইনতো সবার জন্যই সমান। একেক অভিযানে একেক আইন প্রয়োগকে রহস্য জনক মন্তব্য করেন অনেকে। গতকাল বুধবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন হবিগঞ্জ জেলার সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও অভিযানের নির্বাহী ম্যাজেষ্ট্রিট লুসিকান্ত হাজং। তাকে সহযোগিতা করেন নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কমিশনার (ভূমি) সুমাইয়া মমিন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিনহাজ আহমেদ শোভনসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও নবীগঞ্জ থানার একদল পুলিশ। এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, অবৈধভাবে নদী দখল উচ্ছেদ অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া এটি অব্যাহত থাকবে। মাপজোকে সার্ভেয়াররা অনিয়ম দুর্নীতি করেছেন এমন গুঞ্জন রয়েছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবৈধ স্থাপনা মাপজোকের সময় যারা আপত্তি করে লিখিত আবেদন করেছেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে পুনরায় অনেক জায়গায় আবার মাপযোগ করা হয়েছে। এতে কোনো অনিয়ম হয়নি। প্রয়োজনে পুনরায় মাফঝোক করা হবে। সরকারের ইঞ্চি পরিমান জায়গা ছাড় দেয়া হবেনা। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এমএল সৈকত বলেন, সার্ভেয়ারদের উৎকুচ গ্রহন এবং মাফঝোকে অনিয়মের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নবীগঞ্জ পৌরসভা, সহকারী কমিশনার (ভুমি) এবং পানিউন্নয়ন বোর্ডের ৩ প্রতিষ্টানের সার্ভেয়ারের সমন্ময়ে মাফঝোক হয়। লক্ষ লক্ষ টাকার বানিজ্যের কোন সুযোগ নেই।
Leave a Reply