নবীগঞ্জ(হবিগঞ্জ)সংবাদদাতা:হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ পৌরসভার ৭টি পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম, দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগে বিক্ষোভ মিছিল ও পৌরসভা কার্য্যালয় ঘেরাও করেছে নিয়োগ পরীক্ষায় বঞ্চিতরা। এ সময় উত্তেজিত আন্দোলনকারীরা পৌর মেয়রের কার্যালয়ের একটি গ্লাস ভাংচুর করেছে।
আন্দোলনকারীদের ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটামের প্রেক্ষিতে ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে পৌর কর্তৃপক্ষ ৩ দিনের ভিতর বিষয়টি তদন্ত পূর্বক মিমাংসা দেওয়ার আশ্বাসে তারা বাড়ি ফিরেন।
আন্দোলনকারী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রকাশ, চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারী পত্রিকার মাধ্যমে ওই পৌরসভার সার্ভেয়ার, সহকারী এ্যাসেসর, সরকারী লাইসেন্স পরিদর্শক, হিসাব সহকারী, নি¤œমান সহকারী কাম-মুদ্রাক্ষরিক, ট্রাক চালক, অফিস সহায়ক ৭টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
এরই প্রেক্ষিতে ২৫ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ৭ টি পদের বিপরীতে প্রায় ৩শ ৮৬ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেন। আবেদনকারীদের মধ্য থেকে বিভিন্ন অজুহাতে ১শত ৪২ জনের আবেদন বাতিল করে পৌর কর্তৃপক্ষ। অবশিষ্ট ২শ ৪৪ জনের লিখিত ও মৌখিত পরীক্ষায় অংশ গ্রহনের জন্য প্রবেশ পত্র দেয়া হয়। তবে ২০৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৩ এপ্রিল শুক্রবার সকাল ১০ টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়।
অভিযোগ উঠে, পৌর মেয়র আলহাজ্ব ছাবির আহমদ চৌধুরী’র চাচাতো ও মামাতো ভাইসহ ঘনিষ্ট ৭ জনকে পূর্বের ঘোষনা অনুযায়ী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এনিয়ে ওই দিনই আলোচনা সমালোনায় মূখর ছিল পৌর প্রাঙ্গঁন এবং চাকুরী বঞ্চিতদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
তারা কোন উপায় না পেয়ে গতকাল রবিবার বেলা ৩ টায় শহরের নতুন বাজার মোড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ ও পৌরসভা ঘেরাও এর ডাক দেন। প্রথমে শহরের নতুন বাজার মোড় থেকে বিভিন্ন লেখা সম্বলিত প্লে-কার্ড নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে পৌরসভা কার্য্যালয় ঘেরাও করে চাকুরী বঞ্চিত বিক্ষোভকারীরা। এ সময় পৌর মেয়রের কার্য্যালয়ে তালা ঝুলানো থাকায় একটি গ্লাস ভাংচুর করে আন্দোলনকারীরা।
এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা নিয়োগ বাতিলের জন্য ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন। খবর পেয়ে তাৎক্ষনিকভাবে উপজেলা পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব সাইফুল জাহান চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ মিলু, পৌর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক নির্মেলেন্দু দাশ রানাসহ আওয়ামলীলীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হয়ে উত্তেজিত আন্দোলনকারীদের সাথে একমত পোষন করে বক্তব্য প্রদানকালে তারা বলেন, নিয়োগে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, কারচুপি হলে কোন মুর্হুতেই মেনে নেওয়া যাবে না।
এ সময় পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ এটিএম সালাম, কাউন্সিলর মোঃ আলা উদ্দিন, কাউন্সিলর প্রাণেশ দেবসহ পৌর কর্তৃপক্ষ উপস্থিত হয়ে উত্তেজিতদের শান্তনা দিয়ে তাদের উদ্যোশে বলেন, আগামী ৩ দিনের মধ্যে জরুরী সভার ডেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।
এ প্রেক্ষিতে আন্দোলনকারীরা ৩ দিনের মধ্যে অবৈধ নিয়োগ বাতিল না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসুচী ঘোষনা করা হবে বলে হুশিয়ার করে দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারী কয়েকজন জানান, ওই নিয়োগ পরীক্ষায় নবীগঞ্জ জে কে হাই স্কুলের শিক্ষক রাজিব দাশ হিসাব সহকারী পদে লিখিত পরীক্ষায় পৌর মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরীর চাচাতো ভাই জুয়েল চৌধুরীর পাশে বসে তাকে সহযোগীতা করেন।
কিন্তু অদৃশ্য কারনে মৌখিক পরীক্ষায় রাজিব দাশ অংশ গ্রহন করেননি। অবশেষে এ পদে চাকুরী হয়েছে পূর্ব থেকেই আলোচনায় আসা পৌর মেয়র এর চাচাতো ভাই জুয়েল চৌধুরীর। একই স্কুলের শিক্ষক অজয় মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরীর ঘনিষ্টজনের প্রক্সি দেয়।
নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারী ফায়জুর রহমান নিয়োগ কমিটিকে চ্যালেঞ্জ করে জানায়, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় সে শতভাগ উত্তর দিয়েছে এবং তা সঠিক হয়েছে। এরপরও সে অযোগ্য হয়েছে।
এ ছাড়া অযৌক্তিকভাবে প্রায় শতাধিক আবেদন বাতিল করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন আন্দোলনকারীরা।
এ ব্যাপারে নিয়োগ কমিটির সদস্য ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) আতাউল গণি ওসমানী বলেন, মৌখিক পরীক্ষা চলাকালিন সময়ে দুই ছাত্রের রোল নং কাটাকাটি হলে খোঁজ করে তাদেরকে না পাওয়ায় প্রক্সির সন্দেহ হয়। এবং পরে আরেকজন ছাত্র লিখিত পরীক্ষা ভালো হওয়া সত্ত্বেও সে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ না নেয়ায় তাকেও প্রক্সি পরীক্ষা দিয়েছে বলে সন্দেহ রয়েছে।
Leave a Reply