বাসস : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র থেকে বিরত থাকার জন্য বিএনপি’র প্রতি আহবান জানিয়ে বলেছেন, তারা এই অপচেষ্টা করলেও সফলকাম হতে পারবে না। কারণ, জনগণ আওয়ামী লীগের সঙ্গে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় গত বুধবার রাজধানীতে বিএনপি’র সন্ত্রাসীদের পুলিশের ওপর হামলা এবং তাদের গাড়িতে অগ্নিসংযোগের কঠোর সমালোচনা করে এ ধরনের হামলা প্রতিরোধে জনগণকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, কাজেই আমি তাদেরকে বলতে চাই তাদের প্রচেষ্টা এমন হওয়া উচিত যাতে করে নির্বাচনটা অনুষ্ঠিত হতে পারে, তাদের এটি বানচালের ষড়যন্ত্র করা উচিত নয়।’
প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ বিকেলে তাঁর ধানমন্ডিস্থ দলীয় কার্যালয়ে দলের সংসদীয় বোর্ডের সভার প্রারম্ভিক ভাষণে এ কথা বলেন।
বিএনপি ২০১৪ সালেও নির্বাচন বানচালে এ ধরনের ষড়যন্ত্র করলেও সফল হতে পারেনি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘ভবিষ্যতেও তারা সফল হতে পারবে না। কারণ, জনগণ আমাদের সাথে রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাঁদের ভোট, গণতন্ত্র এবং সাংবিধানিক অধিকারকে সমুন্নত রাখতে বিএনপি’র সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানান।
তিনি বলেন, ‘আমি বিএনপি’র যেকোন ধরনের সন্ত্রাস এবং মানুষকে বোমা মেরে পুড়িয়ে মারার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানাব। কারণ, জনগণের ভোট, গণতন্ত্র এবং সাংবিধানিক অধিকারকে নিজেদেরই রক্ষা করতে হবে।’
জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তাঁর দল সবসময়ই জনগণের পাশে রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের অধিকােেক সমুন্নত করার জন্য আমরা সবসময়ই জনগণের পাশে রয়েছি এবং থাকবো।’
গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে সমুন্নত রাখতে হবে এবং এর মাধ্যমেই দেশ এগিয়ে যাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেশকে আরো উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলবো ইনশাল্লাহ।’
গতকাল রাজধানীর বিএনপি অফিসের সামনে বিএনপি’র সন্ত্রাসী হামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নির্বাচনের আগে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল।
‘কিন্তু বিএনপি’র এরকম পরিবেশ ভাল লাগেনি এবং তারা এরমধ্যে পানি ঢেলে দিয়েছে। আমরা গতকাল সেরকমটাই দেখেছি, ’যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন বিএনপি নেতা সে সময় হঠাৎ একটি মিছিল নিয়ে বিএনপি অফিসের সামনে হাজির হলো, যেটা তাদের করার কথা নয় এবং তারা কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করলো এবং তাঁদের তিনটি গাড়ি পুড়িয়ে দিল।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি আবারো আগুন সন্ত্রাস শুরু করেছে যেমনটি তারা ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে করেছিল। এই দলটি আগুন সন্ত্রাস ছাড়া আর কিছু যে পারে না এই ঘটনাই সেটার প্রমাণ।’
‘এটা খুবই দুঃখজনক যে, দেশের জনগণ যখন উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে ঠিক সে সময়ই বিএনপি পুণরায় তাদের স্বরূপে আবির্ভূত হল,’ বলেন তিনি।
গতকালের ঘটনার দায় ছাত্রলীগের ঘাড়ে তুলে দেয়ার অপচেষ্টা করছে বিএনপি উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিজের দায় অপরের কাঁধে চাপাতে দলটি খুবই পারঙ্গম।
তিনি বলেন, ‘যখন বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের ফুটেজে দেখা যাচ্ছে বিএনপির সন্ত্রাসিরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে তখন বিএনপি নেতৃবৃন্দ তড়িঘড়ি বিবৃতি দিল ছাত্রলীগই এই ঘটনার জন্য দায়ী তারাই পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন তাহলে কি ছাত্রলীগ এবং যুবলীগের কর্মীরা সে সময় ও বিএনপি অফিসের সামনে উপস্থিত ছিল? আর তারা সেখানে যাবেই বা কেন?
বিএনপি’র সন্ত্রাসীরা তাঁদের তিনটি যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়ার পরেও গতকালের ঘটনায় ধৈর্য প্রদর্শনের জন্য প্রধানমন্ত্রী পুলিশ বাহিনীর প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, ‘জনগণের জান-মাল ধ্বংস করা অত্যন্ত দুঃখজনক, বিশেষ করে যখন নির্বাচনের আগে একটি উৎসবমুখর পরিবেশে রয়েছে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ চায় উৎসবমুখর পরিবেশে একটি নির্বাচন এবং তাঁরা নিজেরাই নিজেদের পছন্দমত সরকার নির্বাচন করতে চায়।
বিগত ১০ বছরে দেশের ব্যাপক উন্নয়নের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আশাবাদি উন্নয়নের যে ধারা আমরা শুরু করেছি তা অব্যাহত থাকবে এবং এর মধ্যদিয়েই দেশ আরো এগিয়ে যাবে। কারণ, সাধারণ মানুষ ভালো থাকলে তাদের (বিএনপি) দুঃখ হয়, তা না হলে তাদের নেত্রী এতিমের টাকা আত্মসাত করতে পারতো না। যে কারণে সে এখন জেলে রয়েছে।
কারো নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দলের অন্য নেতাদের মধ্যেও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামী, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা এবং বিদেশে অর্থ পাচার মামলারও আসামী রয়েছে।
বিএনপি’র দলীয় গঠনতন্ত্র সংশোধনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি তাদের গঠনতন্ত্রের ৭ ধারাকে বাদ দিয়ে সাজাপ্রাপ্ত, মামলার আসামীদের নিয়ে দল গড়েছে । অর্থাৎ খুনের মামলা, ডাকাতি এবং দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্তরা তাদের নেতৃত্বে বহাল থাকতে পারবে এবং যেটা তারা প্রমাণও করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বড় বড় কথা বলে তারাই দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। একদিক থেকে তারা ভালই করেছে কারণ আমি চাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক এবং সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে চাই যেখানে জনগণ স্বাধীনভাবে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় আওয়ামী লীগের মননোয়ন প্রত্যাশীদের দলের মনোনয়নের জন্য ৪ হাজারের অধিক মনোনয়ন ফর্ম সংগ্রহের উল্লেখ করে বলেন,‘এত বিপুল সংখ্যক মনোনয়ন প্রত্যাশী থেকে ৩শ’ জনকে মনোনয়ন প্রদান করা সত্যিই খুব কঠিন কাজ। কিন্তু ইনশাল্লাহ আমরা তা করতে সক্ষম হব।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার পাশাপাশি তাঁদের জীবন-মান উন্নয়নে জনগণ নৌকায় ভোট প্রদান করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে আশাবাদী- দেশের উন্নয়নের ধারা বজায় রাখার জন্য এবং তাঁদের জীবন-মানের উন্নয়নের জন্য জনগণ নৌকায় তাঁদের ভোট প্রদান করবে এবং আমরা অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব, ইনশাল্লাহ।’
Leave a Reply