নোয়াখালী প্রতিনিধি:সকল প্রকার নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, বিচারহীনতা, ঘুষ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে নোয়াখালী জেলা শহরের মাইজদীতে ‘আমরা নির্যাতিতা নারী’র ব্যনারে এক মানববন্ধন-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার শহরের টাউনহল মোড়ে প্রধান সড়কে ঘন্টাব্যপী এ কর্মসূচি চলে।
এতে বিভিন্ন সময় ধর্ষণসহ নানা নির্যাতনের শিকার নারী, তাদের পরিবারের সদস্য ছাড়াও সংহতি জানিয়ে অংশ নেন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে এসব ঘটনার প্রতিবাদ হলেও নির্যাতিতারা একত্রিত হয়ে এ প্রতিবাদ নোয়াখালীতে প্রথমই দেখা গেছে। নারী নেত্রী স্বর্ণালী আচার্য্যরে পরিচালনায় মানববন্ধন-সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, গত ৩০ ডিসেম্বর সুবর্ণচরে গণধর্ষণের শিকার ৫ সন্তানের জননী, ১৮ জানুয়ারি কবিরহাটে গণধর্ষণের শিকার ৩ সন্তানের জননী, ৩১ মার্চ সুবর্ণচরে গণধর্ষণের শিকার ৬ সন্তানের জননী ও তাদের স্বামী। এর বাহিরে বিভিন্ন সময় স্বামী, স্বামীর পরিবার ও তথাকথিত সামাজিক পতীদের দ্বারা নির্যাতিতারাও বক্তব্য রাখেন। এছাড়া সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন বাসদ (মার্কসবাদী) নোয়াখালী জেলা কমিটির সদস্য তারকেশ্বর দেবনাথ নান্টুসহ অনেকে।
সমাবেশে গণধর্ষিতা পারুল আক্তার তার বক্তব্যে বলেন, আমি গত জাতীয় নির্বাচনে পছন্দের প্রতীকে ভোট দেয়ায় রুহুল আমিন গংরা আমাকে ধর্ষণ করে। আমি তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী করছি। ভোটের কারণে ধর্ষণের কথা উল্লেখ না করে পূর্ব শত্রুতার কথা বলে তদন্ত কর্মকর্তা মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চান। আমার সাথে কারো পূর্ব শত্রুতা নেই এবং আমি এর তীব্র প্রতিবাদ করি। তাদের পছন্দের প্রতীকে ভোট না দেয়া এবং আমার পছন্দের প্রতীকে ভোট দেওয়াই হল শত্রুতা। আমার মত আর কোন নারী যেন ধর্ষণের শিকার না হয়।
নবগ্রামের পারভীন আক্তার বলেন, আমি তিন সন্তানের জননী একজন নিরীহ গৃহবধু। গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে কবিরহাট থানা পুলিশ মুরাদুজ্জামান, ইব্রাহিমসহ আরো কয়েকজনকে নিয়ে আমার স্বামীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। আমার স্বামী বাড়িতে না থাকার সুযোগে গত ১৮ জানুয়ারি দিবাগত রাত্রে জহিরগংরা ৬-৭জন আমার ঘরে ঢুকে ৩জন ধর্ষণ করে। আমি এ ঘটনার ন্যায় বিচার চাই। পুলিশ ধর্ষণের আলামত সরিয়ে ফেলেছে। আসামীদেরকে গ্রেপ্তার করতেছে না, স্বীকারোক্তিও আদায় করছে না। অন্যদিকে মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য আমাদের আত্মীয় স্বজনকে মামলার সাথে যুক্ত করে পারিবারিক কলহ সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।
রওশন আক্তার বলেন, গত ৩১ মার্চ সুবর্ণচর বেচু-বাসার গংরা সন্ধ্যা ৮টার দিকে বাড়ি আসার পথে আমার স্বামীকে মারধর করে গাছের সাথে বেঁধে আমাকে নির্জনস্থানে নিয়ে ধর্ষণ করে। আসামীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করছি। আমার মত অসহায় নারীরা যেন আর গ্রামেগঞ্জে ধর্ষণ, লাঞ্চনা ও নির্যাতনের শিকার না হয়। আমি সামাজিকভাবে নিরাপত্তা চাই ,
নির্যাতিতা নারীদের প্রত্যেকের বক্তব্যে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার প্রবণতার কথা ওঠে আসে। মামলা হলেও পুলিশের অসহযোগিতা, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের নিয়মিত মামলা তুলে নেয়ার হুমকি-ধমকিসহ সামাজিক নানা প্রতিকূলতার কথাও তুলে ধরেন নির্যাতিতারা। তারা বলেন, মামলা হলেও আসামী পক্ষের সাথে পুলিশের সখ্যতা এবং বাদী পক্ষকে পুলিশের অসহযোগিতার কারণে সঠিক বিচার পাচ্ছে না তারা। নির্যাতিতা নারী ও তাদের পরিবার সমাবেশ থেকে ধর্ষণসহ সকল প্রকার নারী নির্যাতন ও হত্যার প্রতিবাদের পাশাপাশি দোষিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান। একই সঙ্গে সর্বস্তরের মানুষকে নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলারও আহ্বান জানান।
Leave a Reply