নোয়াখালী প্রতিনিধি:রাজধানী ঢাকা চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে নিহতের ঘটনায় নোয়াখালীর বিভিন্ন উপজলোয় এ পর্যন্ত ১৫ জনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। স্বজনদের দাবি এখনো ২০ জনের মতো নিখোঁজ রয়েছে। শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারী) রাত পর্যন্ত জেলার সোনাইমুড়ি, বেগমগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ ও হাতিয়ার বিভিন্ন স্থানে নিহতদের পারিবারিক কবরস্থানে ১৫ জনের দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
এদিকে, এমন হৃদয় বিদারক ঘটনায় সোনাইমুড়ি, বেগমগঞ্জ, কোম্পনীগঞ্জ ও হাতিয়ার ওই সব গ্রামে নিহতদের পরিবারগুলোতে চলছে শোকের মাতম। অন্যদিকে, জেলার বিভিন্ন মসজিদ ও ইবাদতখানায় নিহতদের স্মরণে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়েছে।
নিহতদের স্বজন ও স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবী, রাষ্ট্র যদি জনগণের কর্মসংস্থান, নিরাপত্তার বিধান ও বাস্তবায়ন রেখে পরিকল্পিতভাবে দোকানপাট, বাসভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে, তাহলে এরকম মর্মান্তিক প্রাণহানি আর হবেনা। কারণ এরকম আকস্মিক ভয়াবহ দূর্ঘটনায় পরিবারের কর্মক্ষম আপনজনকে হারিয়ে পরিবার নিঃস্ব হয়ে এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে। কিভাবে তারা এই অপূরণীয় ক্ষতি পূরণ করবে?।
জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলার নাটেশ্বর, বারগাঁও, নরোত্তমপুর ইউনিয়নগুলোর বিভিন্ন গ্রামে চলছে শোকের মাতম। এখন পর্যন্ত ১৫ জনের দাফনের খবর পাওয়া গেছে। বেগমগঞ্জ উপজেলার মুজাহিদপুর গ্রামের কামাল হোসেন ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরএলাহী গ্রামের জসিম উদ্দিন। নাটেশ্বর ইউনিয়নের নজরপুর গ্রামের খাসের বাড়িতে একই পরিবারের দুই সহোদর মাসুদ রানা ও রাজুর দাফন হয়েছে সকাল দশটায়। নিহতদের চাচা আবদুর রহিম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, নিমতলী ট্র্যাজেডির পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ায় পুনরায় চকবাজারে একই ঘটনা ঘটেছে।
নাটেশ^র ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন স্বপন জানান, বটতলি গ্রামের সাহাদাত হোসেন হিরা, মির্জা নগরের আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, নাছির উদ্দিন, আলী হোসেন ও হেলাল উদ্দিন এবং পাশ^বর্তী বারগাঁও ইউনিয়নের কৃষ্ণরামপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
এরআগে, গত দুইদিন ধরে হতাহতের খবরে স্বজনদের আহাজারিতে নোয়াখালীর গ্রামে গ্রামে স্বাভাবিক পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ স্বজনদের এখনো সন্ধানই পাচ্ছেন না, তারা বেঁচে আছেন কি মরে গেছেন তাও জানেন না অনেকে। এখনো অনেকেরই কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু সোনাইমুড়ির নাটেশ্বর ইউনিয়নের সহ¯্রাধিক মানুষ ঢাকার চকবাজারে ব্যবসা ও বসবাস করছেন।
বজরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোকলেছুর রহমান জানান, নোয়াখালীর মানুষ জীবন-জীবিকার তাগিদে ঢাকা চকবাজার ব্যবসা-বাণিজ্য করতে গিয়ে নিথর দেহে ফিরলো আপন ঠিকানায়। তাই পরিকল্পিত নগরায়ণে চকবাজারের মতো ভবিষ্যতে এমন ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা যেন আর না ঘটে সেই ব্যবস্থা নেবে সরকার এমনটাই প্রত্যাশা এই সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় এলাকাবাসীর।
নাটেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান কবির হোসেন খোকন জানান, এ পর্যন্ত আমার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ১০ জনের দাফন সম্পন্ন হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। তবে এ সংখ্যা বাড়ার আশংকা রয়েছে। কারণ এখনো অনেকের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।
শুক্রবার বিকেলে নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবু ইউছুফ ও (আইসিটি) তারিক উল আলম সহ ৬ সদস্যদের একটি প্রতিনিধি দল নিহতদের বাড়িতে গিয়ে পরিবারগুলোকে সমবেদনা জানান এবং সরকারে পক্ষ থেকে প্রাপ্ত সকল সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে বলে জানান।
এছাড়া প্রত্যক উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাদের বলে দেওয়া হয়েছে, যখনি যেই উপজেলা নিহতের খবর আসবে প্রত্যক নিহতের বাড়ি গিয়ে পরিবারে সাথে দেখা করার জন্য নিদের্শ দেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply