নোয়াখালী প্রতিনিধি:: শতভাগ জৈবপদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে নিরাপদ সবজি। ব্যবহার করা হচ্ছে না কোন প্রকার রাসায়নিক সার ও কীটনাশক। তাই এসব সবজির দামও যেমন বেশি পাচ্ছেন কৃষকরা, বাজারে চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। অধিক লাভের আশায় এ বর্ষা মৌসুমেও পরিচর্যা ও বেচাবিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার সবজী চাষীরা। সারা বছর সবজি চাষের মাধ্যমে এক ফসলী জমিকে পরিণত করেছেন তিন ফসলী জমিতে, পেয়েছেন সফলতা।
নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরক্লার্ক, মোহাম্মদপুর, চরবাটা, পূর্বচরবাটা, চরজব্বর, চরজুবলী ইউনিয়নের চার শতাধিক কৃষক প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন করছেন নিরাপৃদ সবজি। প্রতিটি বাড়িই যেন একটি কৃষি খামার। মাচাং এ ঝুলছে ঝিঙা, চিচিঙ্গা, শশা, লাউ, মিষ্টি কুমড়া আর পানিতে মাছ ও হাস। এ ধরণের সমন্বিত সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন উপজেলার অনেক চাষী। উৎপাদন খরচ কম ও দাম বেশি পাওয়ায় এ ধরণের সবজি চাষীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। তাদের দেখাদেখি উৎসাহিত হচ্ছেন অন্য চাষীরাও। এখানকার উৎপাদিত নিরাপদ সবজিগুলো স্থানীয় ও দেশের বাজারের চাহিদা মিটিয়ে ভবিষ্যতে বিদেশেও রপ্তানির আশা করছেন তারা।
এখানকার উৎপাদিত বিষমুক্ত সবজি বিক্রিকে কেন্দ্র করে উপজেলার সোলেমান বাজার, কালাদূর বাজার, ভ’মিহীন বাজার ও হাতিয়া বাজারসহ বেশ কিছু স্থানীয় পাইকারি বাজার গড়ে উঠেছে। প্রতিদিনই বহু দূর দূরান্ত থেকে পাইকাররা ট্রাক বোঝাই করে সবজি কিনে নিয়ে যান। কিন্তু বাজারজাতকরণ ব্যবস্থা খুব একটা আধুনিক না হওয়ায়, চাষিরা তেমন মুনাফা করতে না পারলেও আড়তদার ও বেপারীগণ অনেক বেশি মুনাফা করেন। সবজি দ্রুতপচনশীল হওয়ায় বাজার মূল্য খারাপ হলেও কৃষক বিক্রয় করতে বাধ্য হন। সারা বছর সবজির উৎপাদন উৎসাহিত করতে হলে, সংরক্ষণ ও ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে। এসব বাজারে পাইকারী দর প্রতি কেজি করলা ৪০, শসা, বরবটি, ঢেঁড়স, চিচিঙ্গা ও ঝিঙ্গা ৩৫ টাকা করে, চালকুমড়া ২০, গ্রীষ্মকালীন টমেটো ৮০, সিম ৫০, পেপে ২০, মিষ্টি কুমড়া ২০ টাকা পাইকারী দরে বিক্রয় হলেও জেলা শহর মাইজদীতেই যার দাম প্রায় দ্বিগুণ।
কৃষকরা জানান, সাত আট বছর থেকে তারা নিরাপদ সবজির আবাদ করার সংগ্রাম করছেন, প্রথম দিকে লোকসানও গুণতে হয়েছে অনেক। সরকারীভাবে কোন ঋন বা সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ করেন তারা। তবে সাগরিকা নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ণ সংগঠণ চাষিদের প্রশিক্ষণ ও ঋণ দিয়ে সহযোগীতা করছেন।
সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার কৃষি কর্মকর্তা শিবব্রত ভৌমিক জানান, সাগরিকার কৃষি ইউনিটের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদনে সমন্বিত শষ্য ব্যবস্থাপনা কর্মসূচী আওতায় কৃষকদের মাঠ পর্যায়ে সহযোগীতা করছেন তারা।
বাংলাদেশ কৃষি গভেষণা ইনিস্টিটিউট নোয়াখালী’র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, মো. আমির ফয়সল জানান, কৃষকদেরকে নিরাপদ ফসল উৎপাদনে কম্পোস্ট সার, ফেরোমন ফাঁদ, ব্যাগিং, নেটিং, ম্যাজিক পদ্ধতি ব্যবহারে উৎসাহিত করছেন তারা। ফলে শতকারা ৮০ জন কৃষক স্বাস্থ্যসম্মত সবজি উৎপাদন হচ্ছে।
কোনো খাদ্যই খাদ্য বলে বিবেচিত হয় না, যদি তা নিরাপদ না হয়। বিষাক্ত সবজি একদিকে যেমন পুষ্টির বদলে নানা রকম রোগের সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে বিদেশে রপ্তানি করার ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। আর এ নিরাপদ ফসল উৎপাদন বর্তমানে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সে চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলার যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তার সফলতার একটা চিত্র হলো নোয়াখালীর সুবর্ণচর। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নিরাপদ সবজি উৎপাদনের ক্ষেত্রে কৃষককে উৎসাহিত করতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
Leave a Reply