নোয়াখালী গান্ধী আশ্রমের ট্রাস্টি বোর্ড সচিব ঝর্ণাধারা চৌধুরী আর নেই

নোয়াখালী প্রতিনিধি::একুশে পদকপ্রাপ্তসহ সমাজসেবায় বিভিন্ন পদকে ভুষিত এবং ভারতের পদ্মশ্রী পদকপ্রাপ্ত মহিয়সী নারী গান্ধী আশ্রমের ট্রাস্টি বোর্ড সচিব শ্রীমতি ঝর্ণাধারা চৌধুরী আর নেই। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা ৩৪ মিনিটে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

আশ্রমের পরিচালক রাহা নব কুমার জানান, ঝর্ণাধারা চৌধুরী দীর্ঘদিন থেকে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত শারীরিক নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ১ জুন মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হলে পরদিন তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত বুধবার তার মস্তিস্কে দ্বিতীয়বার রক্তক্ষরণ হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
বর্তমানে তার মৃতদেহ স্কয়ার হাসপাতালের হীম ঘরে রাখা হয়েছে। শুক্রবার নোয়াখালীতে তার সারা জীবনের কর্মস্থল সোনাইমুড়ি উপজেলার জয়াগ গান্ধি আশ্রম ট্রাষ্টে আনা হবে, বিকেল ৩টায় শেষবারের মতো সকলের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উমুক্ত করে রাখা হবে, পরে তার অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী তার মৃতদেহ সন্ধানীর নিকট হস্তান্তর করা হবে।
৮০ বছর বয়সী এই মহিয়সী নারী ব্যক্তিগত জীবনে অবিবাহিত ছিলেন। আমৃত্যু তিনি সমাজসেবায় নিজেকে জড়িয়ে রাখেন। তিনি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের সচিবের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ঝর্ণাধারা চৌধুরী ২০১৩ সালে ভারতের রাষ্ট্রীয় বেসামরিক সম্মান পদ্মশ্রী খেতাবে ভূষিত হন। সমাজসেবক হিসেবে ১৯৯৮ সালে আন্তর্জাতিক বাজাজ পুরষ্কার, ২০০০ সালে শান্তি পুরষ্কার, ২০০১ সালে অনন্যা, ২০০৩ সালে দুর্বার নেটওয়ার্ক পুরষ্কার, ২০১০ সালে কীর্তিমতি নারী পুরষ্কার, ২০০৫ সালে একুশে পদক, ২০১৩ সালে বেগম রোকেয়া পদক, ২০০৭ সালে সাদা মনের মানুষ পদকসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পদক পেয়েছেন।
ঝর্ণাধারা চৌধুরী লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের কালুপুর গ্রামে ১৯৩৮ সালের ১৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। বাবা গান্ধীয়ান প্রমথ চৌধুরী ও মা আশালতা চৌধুরীর ১১ সন্তানের মধ্যে তিনি দশম।
বাবার মৃত্যুর পর ১৯৫৬ সালে গান্ধীর প্রতিষ্ঠিত অম্বিকা কালিগঙ্গা চ্যারিটেবল ট্রাস্টে (গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট) যোগ দেন ঝর্ণা ধারা চৌধুরী। ১৯৬০ সালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সংসারত্যাগীদের সংগঠন চট্টগ্রামের প্রবর্তক সংঘে যোগদানের মাধ্যমে সরাসরি মানবসেবায় নিয়োজিত হন। এর পাশাপাশি তিনি তার পড়ালেখাও চালিয়ে যান। চট্টগ্রামের খাস্তগীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক ও ঢাকা কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আগরতলায় ত্রাণ কাজে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৭৯ সালে পুনরায় গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টে ফিরে আসেন এবং চারু চৌধুরীর মৃত্যুর পর তিনি গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের সচিবের দায়িত্ব পান।
তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, নোয়াখালী-১ আসনের সংসদ সদস্য এএইছএম ইব্রাহিম, সংসদ সদস্য অরমা দত্ত,বিএনপির ভাইছ চেয়ারম্যান সাবেক সংসদ সদস্য মোঃ শাহজাহান. ভারতীূয় দুতাবাসের ডেপুটি হাই কমিশনার বিশ্বজিত দাস, সুলতানা কামাল, রামেন্দু মজুমদার, ড. দেবপ্রিয় ভট্রাচার্য ও সাংবাদিক স্বদেশ রায় প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা