বাগেরহাট প্রতিনিধি::
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও জোয়ারের প্রভাবে অবিরাম বৃষ্টিতে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন উপকূলীয় এলাকার অর্ধলক্ষ পরিবার। ভেসে গেছে ১৭হাজার মৎস্য ঘের। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বর্ষাকালীন সবজীরও। রাতের আচমকা বাতাসে উপড়ে পড়েছে কয়েক হাজার গাছ। কাঁচা-পাকা সড়কও ডুবেছে বৃষ্টির পানিতে।
গত ২৪ ঘন্টায় শরণখোলা উপজেলায় সর্বোচ্চ ২৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। জেলায় গড় বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ৮৬ দশমিক ২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।
বৃহস্পতিকবার (২৯ জুলাই) সকালে বাগেরহাট সদর উপজেলার খানজাহান পল্লী গোবরদিয়া, কাড়াপাড়া, খানপুর, নাগেরবাজার, সাহাপাড়া, হাড়িখালি-মাঝিডাঙ্গা আশ্রয়ন প্রকল্পসহ বাগেরহাট শহরের বেশ কয়েটি সড়কের উপর এক থেকে দেড় ফুট পানি দেখা যায়। সৃষ্টি হয়েছে। উপযুক্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানিতেই এই অবস্থা বলে দাবি করেছেন অনেকে।
অন্যদিকে শরণখোলার খুড়িয়াখালী, সাউথখালী, কচুয়ার নরেন্দ্রপুর, চন্দ্রপাড়া, রাড়িপাড়া, পদ্মনগর, ভান্ডারকোলা, মোরেলগঞ্জ পৌরসভা এলাকা, শানকিভাঙ্গা, চিংড়াখালীসহ অসংখ্য এলাকা এখন পানিতে নিমজ্জিত। এসব এলাকার মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। রান্না-খাওয়াও বন্ধ রয়েছে পরিবারগুলোর। এছাড়া ভেসে যাওয়া ঘেরের মাছ বাঁচাতে বৃষ্টিতে ভিজেই শেষ চেষ্টা চালাচ্ছেন মাছ চাষীরা।
বাগেরহাট সদর উপজেলার চুলকাঠি এলাকার সাইদুল মীর বলেন, বৃষ্টিতে ঘেরের পাড় এবং ভিটায় সব জায়গায় পানি উঠে গেছে। শসা, ঢেরস, পেপে, লাউসহ সব ধরনের গাছের গোড়ায় পানি রয়েছে। এভাবে দুই একদিন থাকলে সকল শিরা পচে যাবে। পানি কমার সাথে সাথে, রোদ উঠলেই এসব গাছ মারা যাবে। এই বৃষ্টিতে আর্থিকভাবে খুবই ক্ষতির সম্মুখিন হতে হবে আমাদের।
খানপুরের মোঃ আলিমুজ্জামান বলেন, পর পর দুই দিনের বৃষ্টিতে আমাদের ঘর পর্যন্ত পানি উঠে গেছে। পানি নামার কোনো জায়গা নেই। কতদিন পানিবন্দী থাকতে হবে আল্লাহ জানে।
রামপাল উপজেলার পেরিখালি এলাকার মোতাহার হোসেন বলেন, দুই দিনের বৃষ্টিতে এলাকার মানুষের ঘের-পুকুর সব তলিয়ে গেছে। নেট ও মাটি দিয়েও রাখা যায়নি। বন্যায়ও এত পানি দেখা যায় না।
বাইনতলা এলাকার মোহসিন বলেন, বৃষ্টির পানিতে আমাদের বাড়ি ঘরে পানি উঠে গেছে। আমার পাঁচ বিঘা ঘেরের সকল মাছ বের হয়ে গেছে। সবজিরও ক্ষতি হয়েছে ব্যাপকভাবে।
শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী এলাকার শহিদুল ইসলাম বলেন, আম্পান ঘূর্ণিঝড়কে হার মানিয়েছে এই বৃষ্টি। এতবেশি পানিবন্দি মানুষ এক সাথে কখনও দেখিনি।
কচুয়া উপজেলার নরেন্দ্রপুর মোল্লা মোতাহার বলেন, টানা বৃষ্টিতে আমাদের এলাকার অনেক ঘর বাড়ি ডুবে গেছে। গাছপালা পড়েছে অনেকের। ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। পদ্মনগর থেকে নরেন্দ্রপুর যাওয়ার রাস্তাটিও ডুবে গেছে। খুবই সমস্যায় পড়েছি আমরা।
এদিকে শরণখোলা উপজেলায় পানিবন্দি মানুষের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেছে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাতুনে জান্নাত।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাতুনে জান্নাত বলেন, শরণখোলা উপজেলার অধিকাংশ মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। আমরা পানিবন্দি মানুষদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেছি। লোকালয়ের পানি নামানোর জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল বলেন, টানা বর্ষণে বাগেরহাটে ১৭ হাজারের অধিক মৎস্য ঘের ও পুকুর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে চাষীদের প্রায় ১১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে বৃষ্টি যদি অব্যাহত থাকে এই ক্ষতির পরিমান আরও বৃদ্ধি পাবে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, টানা বৃষ্টিতে শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, মোংলা, রামপাল, বাগেরহাট সদর ও কচুয়ার বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় অর্ধলক্ষ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিবন্দী পরিবারগুলোর মাঝে শুকনো খাবার ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ শুরু করেছি। তাদের সব ধরণের সহযোগিতা করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
পানিবন্দিদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ
বাগেরহাট শহরের বিভিন্ন বস্তিতে বসবাসকারী পানিবন্দি পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) বিকেলে বাগেরহাট শহরের রেলরোডস্থ বাগানবাড়ি এলাকায় এই খাবার বিতরণ করেন পৌর কাউন্সিলর তালুকদার আব্দুল বাকি। পরে অন্যান্য বস্তিতেও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়। পানিবন্দি অবস্থায় খাবার পেয়ে খুশি বস্তিবাসি
।
বাগান বাড়ি বস্তির শাহিন, ফুলিসহ কয়েকজন বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে পানিবন্দি রয়েছি। আমাদের বাগানবাড়ির বেশিরভাগ মানুষের বসত ঘর ও রান্না ঘরে পানি উঠেছে। এই সময় খুবই খাবারের কষ্ট হচ্ছে। কাউন্সিলর সাহেব কিছু শুকনো খাবার দিয়েছেন। এতে আমাদের খুবই উপকার হয়েছে।
বাগেরহাট পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তালুকদার আব্দুল বাকি বলেন, আমার ওয়ার্ডের পানিবন্দি কয়েকশ পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। তাৎক্ষনিকভাবে এদেরকে শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বস্তিবাসিদের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply