আজমিরীগঞ্জ -মার্কুলী থেকে শেরপুর: হারিয়ে যাওয়া লঞ্চ চলাচলের দিনগুলো

ডেস্ক রিপোর্ট ::হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ থেকে বানিয়াচং  উপজেলার মার্কুলী বাজার হয়ে মৌলভীবাজার জেলার শেরপুর পর্যন্ত একসময় লঞ্চ চলাচল ছিল কুশিয়ারা নদীভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত এ নদী পথেই যাতায়াত করত হাজারো মানুষ। তবে কালের আবর্তে এটি হারিয়ে গেছে। নতুন প্রজন্মের কাছে এ গল্প শুধুই কল্পকাহিনী বা স্মৃতিচারণ।

 

ইনাতগঞ্জসহ আশপাশের এলাকাগুলোর মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ছিল কুশিয়ারা নদী। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত লঞ্চগুলো কসবা লিপাইগঞ্জ বাজার, চরগাঁও ঘাট,পেছি বাজার,দীঘলবাক,ফাদুল্লা,আহমদপুর ঘাট এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান থেকে যাত্রী নিয়ে শেরপুর পর্যন্ত যেত। শেরপুর থেকে বিকেল সাড়ে ৪টায় শেষ লঞ্চটি ছাড়ত। তখন সড়কপথের অভাবে মানুষ এই নৌপথকে তাদের প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করত।

 

যদি কোনো যাত্রী লঞ্চ মিস করত, তবে একমাত্র বিকল্প ছিল ইঞ্জিনচালিত নৌকা। তবে ঝড় কিংবা বৈরী আবহাওয়ার কারণে নৌকায় ভ্রমণ ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। নদী ডুবির ঘটনাও ঘটত, যা এলাকাবাসীর জন্য এক বড় দুশ্চিন্তার কারণ ছিল।

কুশিয়ারা নদী দিয়ে যে লঞ্চগুলোর চলাচল করতো তার নাম ছিল,এম ডি আরমান,কামাল,ফরহাদ,রুমি,মার্কুলী,পারভীন প্রভৃতি

 

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া ইনাতগঞ্জ থেকে সৈদপুর পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ১৯৯৭ সালে রাস্তাটি পাকা হওয়ার পর কুশিয়ারা নদীর লঞ্চ চলাচল ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। সেই সময় চালু থাকা চান্দের গাড়িও বিলীন হয়ে যায়, আর মানুষের যাতায়াত সড়কপথে কেন্দ্রীভূত হয়।

 

লঞ্চে যাতায়াতের সময় নদীপথের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাত্রীদের জন্য ছিল এক অনন্য অভিজ্ঞতা। নদীর দুই পাড়ের সবুজ প্রকৃতি, পাখির কলরব, আর সজীব বাতাস যাত্রীদের মনকে প্রশান্তি দিত। সেই দিনগুলোকে স্মরণ করে অনেকেই বলেন, “লঞ্চে ভ্রমণের মজাই ছিল আলাদা।”

 

আজকের দিনে বানিয়াচং ও আশপাশের অঞ্চলের মানুষ সড়কপথে সহজেই যাতায়াত করতে পারলেও, নদীপথের সেই আনন্দ তারা উপভোগ করতে পারে না। নতুন প্রজন্মের কাছে এটি এখন শুধুই গল্প এবং ইতিহাস।

নদীপথের এই হারানো ঐতিহ্যকে নতুন করে চেনাতে আমাদের এই প্রচেষ্টা। পরবর্তী আপডেটের জন্য আমাদের সঙ্গে থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা