কানাইঘাট প্রতিনিধি: সিলেটের কানাইঘাট লোভাছড়া পাথর কোয়ারীতে পরিবেশ আইনে টাস্কফোর্সের অভিযান তৎপর ও পাথর ব্যবসায়ী কর্তৃক উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধন এবং নৌপথে পাথরবাহী বাহন থানা পুলিশ কর্তৃক আটক নিয়ে দিনভর উত্তেজনা দেখা দেয়। জানা যায়, গতকাল বুধবার বেলা ১টার দিকে নৌযান আইনে কোয়ারীতে ট্রাস্কফোর্সের অভিযান করতে যান সিলেটের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অতিরিক্ত নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মেজবাহ উদ্দিন। এ সময় তার সাথে কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ শামসুদ্দোহা পিপিএম সহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও লোভাছড়া বিজিবি ক্যাম্পের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অভিযান চলাকালে নৌযান আইনে অন্তত ৪৬টি পাথর বোঝাই ও ৬টি খালি বলগেট ও বাল্কহেড জাহাজের ইঞ্জিন বিকল করা হয়, এতে ৩০/৩৫ লক্ষ টাকার ক্ষতিসাধন হয়। এ সময় কোয়ারীতে পাথর ব্যবসায়ীরা সংগঠিত হয়ে তাদের পাথরবাহী বাহনের কোন ধরনের ক্ষতিসাধন না করে অভিযান বন্ধ করার জন্য ট্রাস্কফোর্সের কর্মকর্তাদের সাথে তর্কবিতর্কে জড়িয়ে পড়েন তারা। তখন কোয়ারী এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করে এবং সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার জন্য অভিযানে নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট বলেন, পরিবেশ আইনে অভিযানের সমস্ত বিধান প্রশাসনের রয়েছে একপর্যায়ে পাথর ব্যবসায়ীরা নৌযান আইন মেনে চলবেন এমন আম্বাসের প্রেক্ষিতে কোয়ারীতে প্রায় ১ ঘন্টা অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে চলে আসেন টাক্সফোর্সের কর্মকর্তারা। সেখান থেকে তারা চলে আসার পর কোয়ারীর পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে উচ্চ আদালতের নির্দেশে কোয়ারী থেকে তাদের বৈধ পাথর পরিবহনে প্রশাসন কর্তৃক অযথা বাঁধা প্রদান তাদের নৌকা-বলগেটের ক্ষতিসাধনের প্রতিবাদে এবং পাথর পরিবহনের সুযোগ করে দেয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি হুশিয়ার জানিয়ে বিকেল আড়াইটার দিকে উপজেলা পরিষদের সামনে সড়কে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে বক্তব্যদানকালে উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি জামাল উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলাম হারুন, অর্থ সম্পাদক পাথর ব্যবসায়ী তমিজ উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক পাথর ব্যবসায়ী আব্দুল হেকিম শামীম, শাহাব উদ্দিন, পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক খাজা শামীম আহমদ শাহীন, যুবলীগের আহ্বায়ক এনামুল হক, শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক জুনেদ হাসান জীবান সহ পাথর ব্যবসায়ীরা বলেন, উচ্চ আদালত কোয়ারী থেকে তাদের পাথর পরিবহনের অনুমতি দিয়েছেন, কিন্তু সিলেটের প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তারা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বারিউল করিম খান ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা তাদের নৌপথে পাথর পরিবহনে বাঁধা প্রদান করে আসছেন। কোয়ারীতে অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের নৌকা-বলগেটের লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতিসাধন করা হচ্ছে। মানববন্ধন থেকে আজ বৃহস্পতিবার থেকে উপজেলা প্রশাসনের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। মানববন্ধন থেকে নির্বাহী কর্মকর্তা বারিউল করিমের অপসারণ দাবী করে তার বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় বক্তব্য রাখা হয়। গত দু’দিন থেকে লোভা-সুরমা নদীর বিভিন্ন এলাকায় থানা পুলিশের বাঁধায় আটকে পড়া তাদের প্রায় দুই শতাধিক পাথর বোঝাই নৌকা, জাহাজ, বলগেট, নৌপথে ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করলে গতকাল বুধবার সকাল থেকে থানা পুলিশ নৌপথে বিভিন্ন এলাকায় পাথরবাহী বাহনগুলো আটক করে রাখে। পাথর ব্যবসায়ীরা মানববন্ধন শেষে সুরমা নদীর বিভিন্ন স্থানে আটকেপড়া পাথরবাহী প্রায় শতাধিক বাহনগুলো নৌপথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে থানার ওসি শামসুদ্দোহা পিপিএম’র নেতৃত্বে সুরমা নদীর খেয়াঘাট এলাকার বায়মপুর গৌরিপুর নৌপথে একদল পুলিশ তাদের বাঁধা প্রদান করেন। এ সময় ওসির সাথে পাথর ব্যবসায়ী তমিজ উদ্দিন, নাজিম উদ্দিন, জেলা পরিষদ সদস্য আলমাছ উদ্দিন, ফখরুদ্দিন সহ পাথর ব্যবসায়ীরা তর্কবিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। পুলিশকে উদ্দেশ্য করে তারা বলেন, আমাদের পাথরবাহী নৌকাগুলো ছেড়ে দেন, লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতিসাধন করবেন না, উচ্চ আদালতের অনুমতি রয়েছে পাথর পরিবহনে তারপরও আপনারা আইন-কানুন কিছুই মানছেন না। পাথরবাহী নৌকা যদি আপনারা আটক করতে চান তাহলে আমাদের লিখিত কাগজপত্র দেন নতুবা আমাদের গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যান। ব্যবসায়ীদের এমন তর্কবিতর্কে নৌপথে উত্তেজনা আবারো ছড়িয়ে পড়ে।
থানার ওসি শামসুদ্দোহা পাথর ব্যবসায়ীদের বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ রয়েছে জব্দকৃত পাথর কোয়ারী থেকে না সরানোর জন্য। মহামান্য উচ্চ আদালত পাথর পরিবহনে ৫ জন ব্যবসায়ীর রীটের প্রেক্ষিতে যে আদেশ দিয়েছেন যথার্থ ভাবে আপনারা পাথরের মালিকানার কাগজপত্র কর্তৃপক্ষকে এখনও দেন নি, তাই পাথর পরিবহন আপাতত আপনাদের বন্ধ রাখতে হবে। পুলিশ ও ব্যবসায়ীদের এমন বাকবিতন্ডাকালে সন্ধ্যা ৬টার দিকে প্রায় দুই শতাধিক পাথর বোঝাই বলগেট, জাহাজ, নৌকা পুলিশের বাঁধা নিষেধ উপেক্ষা করে ব্যবসায়ীরা নৌপথে ছাড়িয়ে নিলে পুলিশ পাথরবাহী নৌকাগুলো আটক করতে ব্যবসায়ীদের ছত্রভঙ্গ করতে কয়েকদফা মৃদু লাঠিচার্জ করে, একপর্যায়ে সুরমা নদীর মুশাহিদ সেতুর দুই তীরে ছেড়ে দেয়া পাথরবোঝাই নৌকাগুলো আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ। সেখানে নৌকাগুলো আটক করে রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বারিউল করিম খাঁনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক জব্দকৃত প্রায় ১ কোটি ৫ লক্ষ ঘনফুট পাথর কোয়ারী এলাকায় রয়েছে। সেখান থেকে পাথর অপসারণ ও পরিবহনের কোন সুযোগ নেই। নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে জব্দকৃত পাথর রক্ষার জন্য কোয়ারীতে পরিবেশ আইনে ট্রাস্কফোর্সের অভিযান করা হয়েছে। কোয়ারী থেকে কোন ধরনের জব্দকৃত পাথর পরিবহন না করার জন্য পাথর ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ওসি শামসুদ্দোহা স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, পাথর ব্যবসায়ীরা নৌপথে পুলিশের বাঁধা নিষেধ উপেক্ষা করে সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের জব্দকৃত পাথর নিয়ে যাওয়ার সময় প্রায় দু’শ পাথরবাহী নৌকা আটক করা হয়েছে, এ ব্যাপারে থানায় একটি সাধারণ ডায়রী করা হবে। ব্যবসায়ীরা আটককৃত পাথরবাহী নৌকাগুলো উপযুক্ত মালিকানার কাগজপত্র প্রদর্শন করলে কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা মোতাবেক এ ব্যাপারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোয়ারী থেকে কোন ধরনের পাথর পরিবহন না করার জন্য তিনি ব্যবসায়ীদের কঠোর নির্দেশ দেন।
Leave a Reply