ডেস্ক রিপোর্ট:: শিক্ষাবিদ মুহিবুর রহমান চৌধুরী স্মৃতি পাঠাগার শুধু একটি স্থাপনা নয়, এটি একটি জীবন্ত সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, যেখানে প্রতিদিন নতুন নতুন চিন্তা-ভাবনা, গবেষণা ও চিন্তার চর্চা হয়। পাঠাগারের শুদ্ধ উদ্দেশ্য এককথায় মানুষের মাঝে জ্ঞান, সংস্কৃতি, এবং মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করা, এবং এটি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বহুমাত্রিক দৃষ্টিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে।
২০০৩ সালের ২৩ আগস্ট নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী কসবা ফরহাদপুর চৌধুরী বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয় “শিক্ষাবিদ মুহিবুর রহমান চৌধুরী স্মৃতি পাঠাগার”। এই পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা হলেন কসবা গ্রামের কৃতী সন্তান, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মরহুম মুহিবুর রহমান চৌধুরীর ভাতিজা, কবি, সাংবাদিক ও সমাজকর্মী এম. গৌছুজ্জামান চৌধুরী এবং তাঁর সহোদর তরুণ কবি ও গবেষক এম. শহিদুজ্জামান চৌধুরী।
এ পাঠাগারের অন্যতম বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর ব্যাপক সংগ্রহ। এখানে রয়েছে বিভিন্ন বিষয়ে দৃষ্টিনন্দন বইয়ের সংগ্রহ, যা শিক্ষার্থীদের জন্য হতে পারে এক অমূল্য সম্পদ। ইতিহাস, বিজ্ঞান, সাহিত্য, গবেষণা, ধর্মীয় গ্রন্থ এবং কাব্যগ্রন্থের সমাহারে পাঠাগারটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। গ্রন্থাগারের মধ্যে এমন কিছু প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক পান্ডুলিপি ও চিঠি সংরক্ষিত রয়েছে যা পাঠাগারের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে।
এ ছাড়াও, এই পাঠাগারে উপস্থিত বিভিন্ন জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তির লেখালেখি, বক্তৃতা এবং গবেষণার মাধ্যমে পাঠাগারের মাধুর্য ও বৈশিষ্ট্য আরও প্রকট হয়েছে। লেখক, কবি, গবেষক এবং সাংবাদিকদের জন্য এটি একটি সম্মানিত স্থান হয়ে উঠেছে, যেখানে তাদের কাজগুলো সংরক্ষিত এবং প্রশংসিত হয়। এর মাধ্যমে, নতুন প্রজন্মকে সঠিক দিশা প্রদানের পাশাপাশি, পূর্ববর্তী প্রজন্মের অবদানও তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
এই পাঠাগারে নিয়মিতভাবে বহু জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিবর্গ পরিদর্শন করেন, এবং তাদের মন্তব্য পাঠাগারের মন্তব্য বহিতে লিপিবদ্ধ রয়েছে। বিভিন্ন কবি, লেখক, সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদগণের উপস্থিতি এই পাঠাগারের গুরুত্ব ও প্রভাবকে আরো বৃদ্ধি করেছে।
এম. গৌছুজ্জামান চৌধুরী শুধু পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা নন, তিনি একজন কবি ও সাংবাদিক। তার কাজের মাধ্যমে, তিনি কেবল নিজের এলাকায় নয়, সারা সিলেট বিভাগে শিক্ষার প্রচার ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৯৬ সালে নবীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজে অধ্যয়নকালীন সময়ে তিনি সাংবাদিকতা ও লেখালেখি শুরু করেন এবং সে সময় থেকেই তিনি সামাজিক বিষয়গুলো নিয়ে গভীর চিন্তা ভাবনা শুরু করেন।
তার প্রেরণায় অনেক তরুণ লেখক এবং সাংবাদিকগণ তাদের কাজের মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছেন। পাঠাগারের মাধ্যমে তিনি নানা দৃষ্টিভঙ্গিতে নিজের সমাজকে আলোকিত করেছেন এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি শিক্ষামূলক, সৃজনশীল পরিবেশ তৈরি করেছেন।
এম. গৌছুজ্জামান চৌধুরী পাঠাগার প্রতিষ্ঠার পর, একের পর এক সৃজনশীল উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি পাঠাগারের পক্ষ থেকে নিয়মিতভাবে জাতীয় দিবসগুলোতে বিভিন্ন প্রকাশনা প্রকাশ করেন, যা পাঠাগারের মধ্যে জ্ঞানচর্চা এবং সামাজিক গুরুত্বকে আরো বৃদ্ধি করেছে। এর মধ্যে “বিজয় নিশান”, “বর্ণমালা” ইত্যাদি প্রকাশনা উল্লেখযোগ্য। এই প্রকাশনা কেবল পাঠাগারের নয়, বরং পুরো সমাজের জন্য শিক্ষামূলক এবং অনুপ্রেরণামূলক হিসেবে কাজ করে।
তার প্রতিক্রিয়া ও কর্মকাণ্ডে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মাঝে বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য তিনি প্রশংসিত হয়েছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সম্মেলন ও সংস্থার পক্ষ থেকে।
তার ভ্রমণপিপাসু মন তাকে ভারত ও ব্রিটেন ভ্রমণ করিয়ে নিয়ে গেছে, এবং ভারত ভ্রমণের উপর লেখা “ঘুরে এলাম বৈচিত্র্যময় ভারত” বইটি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এম. গৌছুজ্জামান চৌধুরী ১৯৭৮ সালের ২ জুলাই নবীগঞ্জ উপজেলার কসবা (ফরহাদপুর) চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।
শিক্ষাবিদ মুহিবুর রহমান চৌধুরী স্মৃতি পাঠাগার শুধু একটি বইয়ের সংগ্রহস্থল নয়, এটি একটি শক্তিশালী সামাজিক পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রও। এখানে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষা সংক্রান্ত সভা, সেমিনার এবং কর্মশালা আয়োজন করা হয়। এসব কর্মসূচি সারা অঞ্চলের মানুষের জন্য একটি শিক্ষামূলক সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
এছাড়া, এই পাঠাগারে এসে বেশ কিছু সমাজসেবী এবং শিক্ষাবিদগণ তাদের কাজের মাধ্যমে সমৃদ্ধ হয়েছেন। তাদের চিন্তা-ভাবনা এবং পরিকল্পনাগুলি এখানকার জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিদের দ্বারা সমর্থিত হয়েছে, যা ভবিষ্যতে বৃহৎ কর্মযজ্ঞে রূপ নিতে পারে।
শিক্ষাবিদ মুহিবুর রহমান চৌধুরী স্মৃতি পাঠাগার একটি প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের মধ্যে জ্ঞান, মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সঞ্চালনের এক শক্তিশালী মাধ্যম। এটি কেবল একটি বইয়ের সংগ্রহ নয়, বরং একটি শিক্ষার, সংস্কৃতির এবং সমাজসেবার কেন্দ্র হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরী করেছে। এম. গৌছুজ্জামান চৌধুরী এবং তার সহকর্মীরা যে ত্যাগ ও পরিশ্রমের মাধ্যমে এই পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেছেন, তা আজ সত্যিই অনুপ্রেরণামূলক। এটি কেবল আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের রক্ষক নয়, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এক অমূল্য সম্পদ হিসেবে কাজ করবে।
Leave a Reply