ডেস্ক নিউজ ::
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত ষাট গম্বুজ মসজিদ শুধু একটি ধর্মীয় স্থাপনা নয়, বরং এটি আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ইসলামি স্থাপত্যকলার এক অনন্য নিদর্শন। স্থাপত্যশিল্পে আগ্রহী যে কোনো মানুষের কাছে এটি এক বিস্ময়কর স্থাপনা।
ইতিহাস
১৫শ শতকে মহান সাধক ও শাসক খান জাহান আলী সুন্দরবনের অরণ্য কেটে জনবসতি গড়ে তোলেন। তাঁর শাসনামলে ইসলামের প্রচার-প্রসার ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র হিসেবে বাগেরহাটে গড়ে ওঠে এক অনন্য নগরী। সেই সময়ই তিনি ষাট গম্বুজ মসজিদ নির্মাণ করেন। যদিও নাম “ষাট গম্বুজ”, তবে মসজিদে রয়েছে ৭৭টি গম্বুজ ও ৬০টি স্তম্ভ। মূলত এই স্তম্ভ সংখ্যা থেকেই মসজিদের নামকরণ হয়েছে।
স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য
সম্পূর্ণ ইট দিয়ে নির্মিত এই মসজিদের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬০ ফুট ও প্রস্থ ১০৮ ফুট।
ছাদে সমানভাবে সারিবদ্ধ ৭৭টি ছোট-বড় গম্বুজ রয়েছে।
অভ্যন্তরে ৬০টি স্তম্ভ মসজিদের ছাদকে ধরে রেখেছে, যা স্থাপত্যকে দিয়েছে অনন্য দৃঢ়তা।
প্রতিটি দরজা ও জানালায় রয়েছে মুঘল আমলের সূক্ষ্ম শিল্পকর্ম ও কারুকাজ।
পরিবেশ ও দর্শনার্থীর অভিজ্ঞতা
ষাট গম্বুজ মসজিদের চারপাশে রয়েছে শান্ত-নিবিড় পরিবেশ। মসজিদের পাশে রয়েছে খান জাহান আলীর সমাধি, যা পর্যটকদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ। স্থানীয় মানুষ বিশ্বাস করেন, খান জাহান আলী ছিলেন একজন ধর্মপ্রচারক ও অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী। ফলে প্রতি বছর এখানে অসংখ্য দর্শনার্থী ও ভক্ত সমাগম ঘটে।
বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি
ষাট গম্বুজ মসজিদের ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যগত গুরুত্ব বিবেচনা করে ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা করে। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান, যেখানে প্রতিদিন দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা ভিড় জমায়।
ভ্রমণ নির্দেশিকা
অবস্থান: বাগেরহাট শহর থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে।
ঢাকা থেকে সড়কপথে বা ট্রেনে খুলনা গিয়ে সেখান থেকে সহজেই পৌঁছানো যায়।
ভ্রমণের সেরা সময়: শীতকাল, কারণ এসময় আবহাওয়া আরামদায়ক থাকে।
সমাপনী কথা
ষাট গম্বুজ মসজিদ কেবল একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা নয়, বরং এটি আমাদের গৌরব ও ঐতিহ্যের প্রতীক। এখানে ভ্রমণে গেলে শুধু একটি স্থাপত্য দেখা হয় না, বরং অনুভব করা যায় বাংলার ইতিহাস, ইসলামি সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিক এক শান্ত পরিবেশ। তাই ভ্রমণপিপাসুদের জন্য ষাট গম্বুজ মসজিদ হতে পারে এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
Leave a Reply