স্টাফ রিপোর্টার::সিলেটের কুমারগাঁও ছাত্র পড়িয়ে বাসায় থাকে সুমন। পাশে আরেকটি বাসায় ছাত্র পড়িয়ে তিন বেলা আহার জুটায় সে। এভাবেই এমসি কলেজে পার করেছে এক বছর। তার বড় একটি স্বপ্ন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। যেই স্বপ্ন সেই পাওয়া এবার এসেছে তার হাতের মুঠোয়। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরিক্ষায় ৬৩তম স্থান লাভ করেছে। তার এ খুশির খবরে দিন মজুর মা আনন্দে উচ্ছ্বসিত এখন। শুধু মা নয়, তার গ্রামের পাঠশালা, হাইস্কুল ও কলেজ শিক্ষকদের মাঝে বইছে খুশির বন্যা। খুশির বন্যা বয়ে চললেও ভাটা পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে। হতদরিদ্র পরিবারের এ সন্তানের ভাগ্য আটকা পড়েছে টাকায়। ভর্তির টাকা যোগাড় না হওয়ায় অদম্য এ মেধাবী শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, সুমন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের মোহনপুর গ্রামের মৃত সুরজনূর মিয়া ও আফতাবুন নেসা দ¤পতির ছেলে। সে পরিবারের ৫ ভাই বোনের মধ্যে সবার বড়। তার বাবা অল্প বয়সেই বিনাচিকিৎসায় মারা গেছেন। দিনমজুর মা-ও অসুস্থ। মা এ বাড়ি ও বাড়ি কাজ করে সংসার ও সন্তানের পড়াশুনার খরচ যোগান দিতেন। গ্রামের অনেকেই জানিয়েছেন, তাদের ছোট্ট একটি ভিটা আছে, ঘর নেই। মামার বাড়িতে থেকে জীবন যাপন করছেন তারা। সরকার যাদের জমি আছে ঘর নেই তাদের গৃহ নির্মাণ করে দিচ্ছেন। কিন্তু এ হতভাগ্য পরিবারের কথা বেমালুম ভুলে গেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। গৃহহীন সুমন ২০১৬ সনে জয়নগর বাজার হাজী গণি বক্স উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৪.৭২ এবং ২০১৮ সালে মঈনুল হক কলেজ থেকে ৪.৮৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। ২০১৮ সনে এমসি কলেজে ভর্তি হন সুমন। তবে এখন স্বপ্নের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তার স্বপ্নের বিস্তৃতি ঘটলেও ভর্তির খরচ জোগান নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন। নিরক্ষর মা ছেলের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণের খবর পেয়ে আনন্দিত হলেও ছেলের ভর্তি নিয়ে উৎকণ্ঠায় আছেন। এদিকে জেলা প্রশাসক মো: আব্দুল আহাদ তাকে পড়াশুনার খরচ বাবদ আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন। এবং গৃহহীন সুমনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির খবর শুনে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়াসমিন নাহার রুমা জানান, গৃহহীন সুমন জীবনের সাথে সংগ্রাম করে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে। তার পরিবার গৃহহীন এমন খবরে আমি রীতিমতো কষ্ট পাচ্ছি। মেধাবী এই শিক্ষার্থীর বাড়ির কাগজ নিয়ে অফিসে যোগাযোগ করতে বলবেন। আমি তাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একটি ঘর দেয়ার সর্বাত্মক সহযোগীতা করব। সুমন বলেন, যার টাকা নেই সে বুঝে জীবন কত কষ্টের। আমি টিউশনী করে এক বাসায় থাকি, আরেক বাসায় টিউশনী করে তিন বেলা খাই। আমার স্বপ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে দেশ গড়ার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করব। এবং অসহায় দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে উচ্চ শিক্ষা অর্জনে তাদের সহায়তায় জীবন উৎসর্গ করব। সুমন তার এ দুর্দিনে যারা পাশে থেকে সহায়তা করে যাচ্ছেন তাদেরকে ইতিহাসে অমর করে রাখবে বলে জানান।
Leave a Reply