রাকিল হোসেন:: ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ ১ আসনে জোটগত সমিকরণে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দুই শীর্ষ দলের প্রার্থী চুড়ান্ত করা হয়েছে। আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পেলেন সাবেক মন্ত্রী ও বার বার নির্বাচিত এমপি, মহান মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম সংগঠন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর প্রয়াত দেওয়ান ফরিদ গাজীর পুত্র হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা শাহ নেওয়াজ মিলাদ গাজী।
গতকাল সোমবার কেন্দ্রী কার্যালয় থেকে মনোনয়নের পত্র সংগ্রহ করেন তিনি। আর ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচন করার ঘোষনা দিয়েছেন প্রয়াত সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার তনয় ড. রেজা কিবরিয়া। তিনি ইতিমধ্যে গনফোরামে যোগদান করেছেন। গত রোববার নবীগঞ্জ নির্বাচন কার্যালয় থেকে ড রেজা কিবরিয়ার পক্ষে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেন তার চাচাতো ভাই গোলাম মুর্শেদ।
এ আসনে আওয়ামীলীগের ৮জন নেতা মনোনয়ন পত্র ক্রয় করেন। যারা মনোনয়ন ফরম ক্রয় করেছিলেন,জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি, জেলা বিএমএ ও স্বাচিপ সভাপতি এবং জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডাঃ মুশফিক হোসেন চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী দেওয়ান ফরিদ গাজীর পুত্র শাহ নেওয়াজ মিলাদ গাজী, হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য এডঃ আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী. জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি, নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট আলমগীর চৌধুরী,নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও গজনাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুল,কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সদস্য ডা: নাজরা চৌধুরী,কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য আব্দুল মুকিত চৌধুরী।
বর্তমান সংসদ সদস্য (মহাজোট থেকে নির্বাচিত) জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আব্দুল মুনিম চৌধুরী বাবু এ আসনে দলীয় মনোনয়নপত্র ক্রয় করেন। তিনি পুনরায় মহাজোট থেকে মনোনয়ন পেতে জোর লড়াই চালান। গত কয়েকদিন ধরে নবীগঞ্জ উপজেলার সর্বত্র এ আসনে আওয়ামীলীগের নৌকার মাঝি শাহ নেওয়াজ মিলাদ গাজী দলের মনোনয়ন পাচ্ছেন। আবার মহাজোটের শরীক দল জাপার বর্তমান এমপি এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে চুড়ান্ত হয়েছেন এমন গুঞ্জন শুনা গেলেও শেষ পর্যন্ত শাহ নেওয়াজ মিলাদ গাজীকে আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে মনোনীত প্রার্থী ঘোষণা করা হয় ।
বিগত ২০১৪ সালে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়ে ছিলেন ফরিদ গাজীর বড় ছেলে দেওয়ান শাহনেয়াজ মিলাদ গাজী । তিনি মহাজোটের কারনে নেত্রীর নির্দেশে মনোনয়ন প্রত্যাহার করলে জাপার আব্দুল মুনিম চৌধুরী বাবু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হন।
এছাড়া দলীয় মনোনয়ন নিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও হবিগঞ্জ জেলা জাপার সভাপতি আলহাজ্ব আতিকুর রহমান আতিক।
অপর দিকে গত বৃহস্পতিবার লন্ডনস্থ বাঙ্গালী কমিউনিটি নেতা বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও শিক্ষানুরাগী অধ্যাপক আব্দুল হান্নান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র ফরম সংগ্রহ করায় ভোটের সমিকরন নিয়ে ধুম্রজাল দেখা দিয়েছে।
এদিকে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবেক এমপি শেখ সুজাত মিয়া নিজের দলের প্রার্থী হিসাবে থাকতে জোর লবিং করেছেন। ধারণা ছিল সাবেক এমপি আলহাজ শেখ সুজাত মিয়াতেই আস্থা রাখবে বিএনপি ও ঐকফ্রন্ট। কিন্তু হঠাৎ রেজা কিবরিয়া ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হওয়ায় শেখ সুজাত শিবিরে হতাশা দেখা দেয়। গত বৃহস্পতিবার নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি ও সহযোগি সংগঠন এক বর্ধিত সভায় শেখ সুজাতকে প্রার্থী দেয়ার জোর দাবি জানায়। আবার বিএনপি নেতাকর্মীরা অনেকে বলেছেন, কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির স্বার্থে দল ও ফ্রন্টের সিদ্ধান্তই মেনে নেবেন তারা।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, রেজা কিবরিয়া তার বাবার আদর্শ-অর্জন নষ্ট করতেই এমন ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভোটে তার ভরাডুবি হবে।
নির্বাচনে ধানের শীষ নিয়ে ড. রেজা কিবরিয়া থাকলে সাবেক এমপি শেখ সুজাত মিয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও দল মতের উর্ধে উঠে তাঁর নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নবীগঞ্জ পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হোসেন বলেন, এখানে যেকোনো পরিস্থিতিতে বিএনপি জোটের প্রার্থী ড. রেজা কিবরিয়া শক্তিশালী প্রার্থী। আমরা তাকে নিয়ে আবারো বিএনপিকে আসনটি উপহার দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের জোটের যে কোন প্রার্থী আসলে দলের স্বার্থে তার পক্ষে কাজ করবো।
এ আসনে ১৯৭০ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবদুল আজিজ চৌধুরী, ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের আবদুল মান্নান চৌধুরী ছানু মিয়া, ১৯৭৯ সালে নির্বাচিত হন জাসদ প্রার্থী মাহবুবুর রব সাদী, ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইসমত আহমদ চৌধুরী, ১৯৮৮ সালে জাসদের অ্যাডঃ আবদুল মোছাব্বির, ১৯৯১ সালে জাতীয় পার্টির খলিলুর রহমান চৌধুরী রফি, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রয়াারী নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী শেখ সুজাত মিয়া, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে টানা ৩ বার জয়ী হন আওয়ামীলীগের দেওয়ান ফরিদ গাজী। ২০১০ সালের ১৯ নভেম্বর দেওয়ান ফরিদ গাজী মৃত্যুবরণ করেন। পরে উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপি প্রার্থী শেখ সুজাত মিয়া। ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাপার এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু নির্বাচিত হন।
এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা হলো ৩লক্ষ ৬৪ হাজার ৯ শ ৪৫জন। পুরুষ ভোটার ১লক্ষ ৮০হাজার ৮শ ২৬জন। মহিলা ভোটার সংখ্যা হলো ১ক্ষ ৮৪হাজার ১শ ১৯জন।
Leave a Reply