হবিগঞ্জ-১ আসনে ভোটে প্রথম কোনো নারী সংসদ সদস্য হলেনএডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী

বুলবুল আহমেদ::হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে ব্যালেটের মাধ্যমে জনগণের ভোটে প্রথম কোনো নারী সংসদ সদস্য হলেন স্বতন্ত্র পদপ্রার্থী এডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী। এডভোটেক আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী’র বাড়ি হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার খাগাউড়া গ্রামে। তিনি পেশায় একজন আইনজীবী। কেয়া চৌধুরী দশম সংসদে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনির বাবা হবিগঞ্জের প্রয়াত রাজনীতিবিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য মানিক চৌধুরী ২০১৫ সালে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। বাবার ইতিবাচক ভাবমূর্তি নিয়ে কেয়া চৌধুরী’র পথচলায় শক্তি বাড়িয়ে দেয়।

হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনটিকে সাধারণত আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে এ আসনে জয়ী হন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা দেওয়ান ফরিদ গাজী। তাঁর মৃত্যুর পর ২০১০ সালে উপ-নির্বাচনে জয়ী হন বিএনপির প্রার্থী শেখ সুজাত মিয়া। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে জোটের স্বার্থে আওয়ামী লীগ এ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হন যুক্তরাজ্য প্রবাসী জাপার নেতা এম.এ মুনিম চৌধুরী বাবু। ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী গাজী মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ। বাবা প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরীর ইতিবাচক ভাবমূর্তি পথচলায় শক্তি বলে জানান আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চান গাজী মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুশফিক হুসেন চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী ও সাবেক নারী সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী সহ সাতজন। কিন্তু দল মনোনয়ন দেয় মুশফিক হুসেন চৌধুরীকে। পরে আওয়ামী লীগ এ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় এবং দলীয় সিদ্ধান্তে মুশফিক হুসেন চৌধুরীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। তবে, আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। এতে, স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা ভোটে কেয়া চৌধুরীর পাশে ছিলেন না। এমনকি হবিগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য এডভোকেট আবু জাহিরসহ জেলার নেতারা নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলায় আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা করে জাপার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দেন। কেয়া চৌধুরী নিজ দলের সমর্থন না পেলেও মনোবল হারান নি। তাঁর পক্ষে ছিলেন বাহুবল উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ফরিদ তালুকদার, যুবলীগ নেতা মোশাহিদ আলী, অলিউর রহমান সহ বেশ কিছু নেতাকর্মী। কেয়া চৌধুরী তাঁর বাবার মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার ভাবমূর্তির সঙ্গে দলের প্রবীণ নেতাকর্মীদের কাজে লাগান। পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের ভোটারদের একটি অংশ তাঁর হয়ে মাঠে কাজ করেছেন। এই নতুন ভোটাররাই তাঁর জয়ে নিয়ামক হয়ে দাঁড়ান। কেয়া চৌধুরী এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমাকে অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। মাঠে রাজনীতি করতে গিয়ে পদে পদে নানা বাধা ও চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হয়েছে। তবু হাল ছাড়িনি তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলাম। আশা করেছিলাম, দলের সবাই আমাকে সমর্থন করবেন। কিন্তু দায়িত্বশীলরা কেউই পাশে ছিলেন না। তাঁদের সমর্থন ছিল জাপার প্রার্থীর পক্ষে। তবে, দলের তৃণমূলের একটি অংশ ছিলে আমার পাশে। তাঁদের শক্তি নিয়েই আমি ছিলাম মাঠে। এতে আমি স্বতন্ত্র পদপ্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে ৭৫ হাজার ৫২টি ভোট পেয়েছি। আমার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন, জাতীয় পার্টির মনোনীত ও আওয়ামী লীগের সমর্থিত এম.এ মুনিম চৌধুরী বাবু, তিনি লাঙ্গল প্রতীকে ৩০ হাজার ৭৬১ ভোট পেয়েছেন। এ আসনে জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতার কারণে আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীকে কোনো প্রার্থী দেওয়া হয়নি। তবে, কেবল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গেই লড়াই নয়, সংসদ নির্বাচনে জয়ের পথে কেয়া চৌধুরীর লড়াই ছিল আরও অনেক কিছুর সঙ্গে। প্রথমে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে না পাওয়া, পুরো নির্বাচনকালীন সময়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের অসহযোগিতার মাধ্যমে জয়ের মালা পড়েছেন তিনি।

এ ছাড়া নিরপেক্ষ ভোটাররাও আমাকেই সমর্থন দিয়েছেন। এতেই তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আমি বিজয় অর্জন করেছি। আমি তাদের কাছে চিরঋণী। সবার কাছে দোয়া চাই আমি যেন দেশ ও মানুষের সেবায় কাজ করতে পারি, আল্লাহ যে আমাকে এই তৌফিক দান করেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা