ফয়সল আহমেদ খান ,বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)প্রতিনিধি ::বর্ষায় অবিরাম বৃষ্টি,গ্রীষ্মেও দহন, পৌষের শীত সবসময় মা সামসুন্নাহার বেগম তার একমাত্র সন্তান প্রতিবন্দ্বী কামরুলের পাশে খোলা আকাশের নীচে সন্তানকে আগলে রাখেন। কারন কামরুলের (২১)গলায় লোহার শেকল বাধা রাখতে হয়।সে শেকল একটি গাছের সাথে আটকানো।বৃষ্টির পানিতে জবুথবু হয়েও কামরুলের মুখে হাসি।মা’ কামরুলের মাথায় হাত রেখে কাঁদছেন।এমনই দৃশ্য দেখা গেলো গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর সদর পৌর এলাকার প্রতিবন্দ্বী কামরুলের বাড়িতে সরেজমিনে পরিদর্শনে গেলে।
কথা বলে জানা গেছে,মাত্র ৩ বছর বয়সে এক মারাত্বক টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয় দরিদ্র পরিবারের আজকের কামরুল।জ্বরের পর থেকে কামরুলকে ধীরে-ধীরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ‘প্রতিবদ্বী’ হিসেবে গলায় শেকলবন্দী করে গাছের সাথে বেধে রাখতে হয় দিন-রাত ২৪ ঘন্টা। কামরুলদের বাড়ীর সামনেই গাছের সাথে বাধ্য হয়েই তাকে বেঁধে রাখে তারাই পিতা-মাতা। একমাত্র ছেলে কামরুলের গলায় আর শেঁকলবন্দী করে গাছের সাথে বেঁধে রাখতে যেয়ে মা শামসুন্নাহার হাঁহাকার করে কেঁদে উঠেন।বিকারগ্রস্থ্য কামরুলকে রাতেও বেঁধে রাখতে হয়।গাছের সাথে গলায় লোহার শেঁকল দিয়ে বেধে রাখার কারন হিসেবে তার পিতা দিনমজুর মো.কামাল মিয়া জানান,-‘‘শেকল বিহীন রাখলে সামনে যা পায় তাই সে খেয়ে ফেলে।গাছের লতা-পাতা বা খাবার অযোগ্য যে কোনো জিনিস-ই সে খেয়ে ফেলে।অনেক সময় চলে যায় অজানা গন্তব্যে।নষ্ট করে ফেলে ঘরের আসবাবপত্র।’’
শীত-বর্ষা,বৃষ্টিতেও তাকে খোঁলা আকাশের নীচে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন তার পরিবার।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর সদর উপজেলার মধ্যপাড়ায় ছোট্র একটি দু’চালা ঘরে বসবাস কামরুলের পরিবারের।
জানা গেছে, অসুস্থ্য হবার পর থেকে টাকার অভাবে এ যাবত ঝাঁড়-ফুঁক আর টোঁটকা চিকিতসা ছাড়া আর কোন বিজ্ঞান সম্মত কোন ভালো চিকিতসা করাতে পারেনি তার পরিবার।আর এ জন্য দিনে দিনে কিশোর কামরুলের মানসিক অসুস্থ্যতা আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। এ নিয়ে দিনমজুর কামরুলের পিতা কামাল মিয়া ও মা শামসুন্নাহারের চোঁখে ঘুম নেই।তারা সমাজের বিবেকবান মানুষের সহায়তা চেয়ে আসছেন ১৫ বছর আগে থেকেই,সেভাবে কেউ এগিয়ে আসেনি।
শৈশবের যে সময়টুকু কাটার কথা দুষ্টুমী আর আনন্দে,যাবার কথা বই-খাতা নিয়ে স্কুলে,সে এখন যাচ্ছে নিকঁষকালো এক ভবিষতের দিকে।যে দিকে কেবল অন্ধকার। কৈশোরের সব সাধ-আহ্লাদ আর স্বপ্নকে দূরে ঢেলে সে আজ সমাজের চোঁখে প্রতিবদ্বী। মানসিক চিকিৎসক গনদের মতে, তাকে সুস্থ্য করে তোলা সম্ভব।আর এ জন্য চাই প্রায় ৩ লাখ টাকা। অনেকে সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও,পরে কেউ দেয়নি।
কামরুলের মা আরো বলেন,কামরুলকে নিয়ে সাংবাদিকরা মজা করেন।তার ছবি ছাপায়।হেরপর আর কোনো খবর নাই।মাঝে মধ্যে দুই/তিনজন কিছু সাহায্য করেছিলো।হেই টাকায় ঢাকায় ডাক্তারের কাছে যাওন যায়,চিকিৎসা করানো যায় না।কিন্তু,আমি তো আমার ছেলেকে ফেলে দিতে পারি না।ও-গলায় শেকলবন্দী ও তীব্র শীতে যতোটা কষ্ট পায়,আমি শিকলবিহীন-ই তারচে বেশী মানসিক কষ্ট পাই’।
প্রতিবেশী সাব মিয়া মেম্বার বলেন, “শিশুকাল থেকেই ছেলেটার কষ্ট। ছেলেটার এমন বন্দিজীবন দেখলে খুবই খারাপ লাগে। বিত্তবানরা যদি তার সাহায্যে এগিয়ে আসতো কিংবা সরকারি কোনো মহল যদি তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিত তাহলে মেয়েটা আবারও সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে পারতো।”
এলাকাবাসী জানান. সদর উপজেলার পৌরসভা ও পৌর মেয়রের বাড়ির কাছেই কামরুলকে বেঁধে রাখা হয়েছে। তাকে যেখানে শেকল দিয়ে দিনরাত ২৪ ঘন্টা বেধে রাখা হয়েছে তার ১০০ গজ দূরে ব্র্যাক, আশা, উদ্দীপন, সিডো নামে বড়বড় সব এনজিও’র শাখা অফিসও রয়েছে। যেচে গিয়ে ঋণ দিয়ে জনমানুষের ভাগ্য উন্নয়নের শপথে বলীয়ান হলেও তারা শেকলে বন্দি কামরুলকে দেখতে পায় না।কোন এনজিও মানবসেবায় না আসাটা বেদনাদায়ক।
Leave a Reply