ইনাতগঞ্জের সোনালী অতীত: পাট ব্যবসার উত্থান-পতন।। ঐতিহ্যের পর্যালোচনা

ডেস্ক রিপোর্ট::নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ এলাকা একসময় ছিল ব্রিটিশ শাসনামলের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। সোনালী আঁশ পাটের জন্য এই অঞ্চল বিখ্যাত ছিল। বর্তমান প্রজন্ম হয়তো জানেই না, পাট ব্যবসার মাধ্যমে তাদের এই অঞ্চলের অর্থনীতি প্রাণ পেয়েছিল।
পাটের জমজমাট দিন:
ইনাতগঞ্জ এলাকা একসময় পাটের জন্য পরিচিতি লাভ করেছিল। বর্তমানে যেখানে ইনাতগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় অবস্থিত, সেই স্থানে ছিল বিশাল পাটের গোদাম। এখান থেকে পাট সংগ্রহ করে ইনাতগঞ্জ বাজার ঘাটে নিয়ে যাওয়া হতো। তারপর বিবিয়ানা নদীর মাধ্যমে জাহাজ যোগে নৌপথে পাট রপ্তানি করা হতো সুদূর ব্রিটেনের ডান্ডি শহরে।
পাটের ব্যবসায়িক কার্যক্রম
ইনাতগঞ্জ বাজার এবং তার আশেপাশের এলাকা তখন পাট ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র ছিল। বিবিয়ানা নদীর তীরবর্তী অবস্থানের কারণে এই অঞ্চল সহজেই ব্যবসায়িক যোগাযোগের সুবিধা পেত। গ্রামের কৃষকেরা তাদের জমি থেকে পাট সংগ্রহ করে এখানে নিয়ে আসত। এরপর সেই পাট স্থানীয় ব্যবসায়ীরা গোদামে মজুদ করত এবং পাট প্রক্রিয়াকরণ শেষে রপ্তানি করা হতো
ঐতিহ্য সংরক্ষণে উদ্যোগ:
পাট প্রক্রিয়াকরণের জন্য সেই সময়ে ব্যবহৃত হতো রোলার। এটি দিয়ে পাটের আঁটি বেঁধে প্রস্তুত করা হতো রপ্তানির জন্য। আজ সেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে ইনাতগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে পাকা করে স্থাপন করা হয়েছে একটি রোলার। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বদরুল আলমের ভাষ্যমতে, “তৎকালীন সময়ের ঐতিহ্যবাহী রোলারটি নতুন প্রজন্মের সামনে উপস্থাপনের মাধ্যমে তাদের অতীত ইতিহাস জানানোই আমাদের লক্ষ্য।”
প্রতীকী চিহ্ন রোলার:
ইনাতগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান রোলারটি সেই ঐতিহাসিক পদ্ধতির এক প্রতীকী চিহ্ন। এই রোলারটি স্মরণ করিয়ে দেয় পাটের ব্যবসায়িক গুরুত্ব এবং এই অঞ্চলের সোনালী অতীত।
পাট ব্যবসার বিলুপ্তি:
পাট একসময় ছিল এই এলাকার মানুষের আয়ের প্রধান উৎস। ১৯৫০ সালের পর থেকে বিশ্ববাজারে কৃত্রিম তন্তুর চাহিদা বাড়তে থাকে। পাটের দাম কমে যাওয়া, আধুনিক কৃষি পদ্ধতির অভাব এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর সংকটের কারণে পাট ব্যবসা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায়। এছাড়া, পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত না হওয়া এবং নদীগুলোর নাব্যতা কমে যাওয়াও এই ব্যবসার পতনে ভূমিকা রাখে।
নতুন প্রজন্মের প্রতি আহ্বান:
নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রাকিল হোসেন বলেন,ইনাতগঞ্জের ঐতিহাসিক গুরুত্ব শুধু স্মৃতিচিহ্নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। নতুন প্রজন্মের উচিত এই ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা এবং দেশের কৃষি ও অর্থনীতিতে অতীতের সাফল্যকে সম্মান জানানো। স্থানীয় ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে ইনাতগঞ্জের মতো অঞ্চলগুলোতে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার পথ খুঁজে বের করা যেতে পারে।
আগামী সংখ্যায়:
আমরা ইনাতগঞ্জের অতীত ও বর্তমানের মধ্যে যোগসূত্র এবং এই বাজারের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের ওপর বিস্তারিত আলোকপাত করব। ইনাতগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ইতিহাস ও নতুন দৃষ্টিকোণ নিয়ে জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা