নবীগঞ্জপ্রতিনিধি ॥ ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ঘেঁষা নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের জনতার বাজার পশুরহাট আর বসবে না এমনটাই জানিয়ে দিয়েছে প্রশাসন। এ বিষয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিয়েছে। হাট বন্ধে ইতোমধ্যে ব্যাপক মাইকিং, পরিদর্শন এবং সরাসরি নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। তবে প্রশাসনের কড়াকড়িকে উপেক্ষা করে হাট বসানোর ব্যাপারে অনড় রয়েছে বাজার পরিচালনা কমিটি, ফলে প্রশাসন ও হাট কমিটির মুখোমুখি অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। সূত্রে বলছে- নির্দেশনা অমান্য করে বাজার বসলে বল প্রয়োগ করবে প্রশাসন।
শুক্রবার বিকেলে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিনের নেতৃত্বে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পাঁচজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, নবীগঞ্জ থানার ওসি এবং বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও আনসার সদস্য নিয়ে জনতার বাজারে পরিদর্শন করা হয়। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মহাসড়কের পাশে পশুরহাট বসানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ জানিয়ে বাজার পরিচালনা কমিটিকে হাট না বসানোর কড়া নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
জানা যায়- হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মো. ফরিদুর রহমান গত ৭ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জনতার বাজার পশুরহাট অপসারণের নির্দেশ দেন। এরপর ৩১ জানুয়ারি থেকে হাট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে হাট-বাজার আইন ২০২৩ ও মহাসড়ক আইন ২০২১ অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সতর্কতাসহ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। তবুও বাস্তবে এসব নির্দেশ কার্যকর হয়নি। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও রহস্যজনক নীরবতার সুযোগে হাট কমিটি গত চার মাসে প্রতি শনিবার অন্তত ১৭ বার অবৈধভাবে পশুরহাট বসিয়েছে।
এদিকে গত ৩ মার্চ বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী তোফায়েল আহমেদ হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন, যাতে হাট বন্ধের জেলা প্রশাসকের আদেশ বাতিল চাওয়া হয়। আদালত জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেন এবং মামলার শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত ৩ মাসের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেন।
জনতার বাজার পশুরহাটে প্রত্যয়ন ফি’র নামে প্রতি শনিবার প্রতি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১,৫০০ থেকে ৩,৫০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। স্থানীয় সূত্র বলছে, ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল মাসে প্রতি হাটে ৫-৭ লাখ টাকা এবং মে মাসে প্রতি হাটে ১০-১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত তোলা হয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ২৪ মে’র বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মহাসড়কের পাশে কোনো গরুর হাট না বসানোর সুপারিশ বাস্তবায়নে আরও কঠোর হয় প্রশাসন। এ বিষয়ে মাইকিং ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হয়। শুক্রবার বিকেলে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. রুহুল আমিন, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ কমর্কর্তা সন্দ্বীপ তালুকদার, নবীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট শাহীন দেলোয়ার, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রাজস্ব শাখার সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রনজিৎ চন্দ্র দাস, সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ উল্লাহ, নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. কামরুজ্জামান সহকারে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও আনসার সদস্যসহ জনতার বাজার পশুরহাট পরিদর্শন করে বাজার সংশ্লিষ্টদের (৩১ মে) শনিবার পশুরহাট না বসাতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়। প্রশাসন জানিয়ে দেয়, নির্দেশ অমান্য করলে বল প্রয়োগসহ সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে বাজার কমিটি জানিয়েছে, তারা যেকোনো পরিস্থিতিতেই শনিবার হাট বসাবে। ইতোমধ্যে হাট বসাতে বাজারের বিভিন্নস্থানে নতুন খুঁটি পোঁতা হয়েছে। এ নিয়ে প্রশাসন ও বাজার কমিটির মুখোমুখি অবস্থান ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
প্রশাসনের সূত্রে জানা গেছে, নির্দেশনা অমান্য করে হাট বসালে দ্রুততম সময়ে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, প্রয়োজনে বল প্রয়োগও করা হবে।
এ প্রসেঙ্গ নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন বলেন- জনতার বাজারে পশুরহাট না বসাতে সরেজমিনে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে, এরআগে বিজ্ঞপ্তি সাটানো ও মাইকিং করা হয়েছে। নির্দেশনা অমান্য করে পশুরহাট বসালে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
Leave a Reply