নিজস্ব প্রতিবেদক::
আগামীকাল, সারাদেশে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, আনন্দ ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হবে মুসলিম উম্মাহর অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা। ‘কোরবানির ঈদ’ নামে পরিচিত এই দিনটি কেবল পশু কোরবানির আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং একজন মুসলমানের জীবনে আত্মত্যাগ, আনুগত্য ও আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস প্রকাশের প্রতীক।
ঈদুল আযহার মূল বার্তা নিহিত রয়েছে নবী হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর জীবনীতে। মহান আল্লাহ তা’আলা যখন তাঁকে আদেশ করেন নিজের প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি দিতে, তখন ইব্রাহিম (আ.) বিনা দ্বিধায় সেই আদেশ পালনের সিদ্ধান্ত নেন। পিতা ও পুত্র—উভয়ে আল্লাহর হুকুমে নিজেদের সঁপে দেন। আল্লাহর সন্তুষ্টির পরীক্ষায় সফল হয়ে ইব্রাহিম (আ.)-এর হাতে ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে জান্নাত থেকে একটি দুম্বা পাঠিয়ে কোরবানি কবুল করেন। এই মহান আত্মত্যাগের স্মরণে আজও বিশ্বজুড়ে মুসলমানেরা ঈদুল আযহা উদযাপন করেন।
ঈদুল আযহা শুধুই একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়। এটি একজন মুসলমানের আত্মশুদ্ধি, আত্মত্যাগ, ও সামাজিক দায়িত্ববোধ জাগ্রত করার অন্যতম মাধ্যম। এখানে শুধু পশু জবাই নয়—বরং নিজের লোভ, অহংকার, হিংসা, হানাহানি—এসব ‘অপশ’কেও কোরবানি দেওয়া ইসলামের অন্তর্নিহিত শিক্ষা।
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে:
> “আল্লাহর কাছে পশুর গোশত বা রক্ত পৌঁছে না, পৌঁছে শুধু তোমাদের তাকওয়া।” (সূরা হজ, আয়াত ৩৭)
ঈদুল আযহা মুসলিম সমাজে সম্পদ বণ্টনের ভারসাম্য বজায় রাখার এক গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী, কোরবানির পশুর মাংস তিন ভাগে ভাগ করতে হয়—একভাগ নিজের জন্য, একভাগ আত্মীয়-স্বজনের জন্য, আর একভাগ গরিব-দুস্থদের মাঝে বিতরণ করতে হয়। এর মাধ্যমে ধনী-দরিদ্রের মাঝে ভ্রাতৃত্ব ও সহমর্মিতা গড়ে ওঠে।
ঈদকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় কোরবানির পশুর হাট জমে উঠেছে। রাজধানীসহ শহরাঞ্চলে স্থাপন করা হয়েছে অস্থায়ী পশুর হাট। ভিড় সামাল দিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত রয়েছে।
ত্যাগের এই মহান দিনে আমরা যেন শুধু আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ না থেকে ঈদের প্রকৃত শিক্ষা—আত্মনিয়ন্ত্রণ, দানশীলতা, পরোপকার ও আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণের অনুশীলন করতে পারি।
এই ঈদ হোক সবার জীবনে শান্তি, সুখ ও কল্যাণের বার্তা।
Leave a Reply