ডেস্ক রিপোর্ট ::
আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রানীগঞ্জ সেতুর উদ্বোধন করেছেন। বঙ্গভবন থেকে ভার্চ্যয়ালি সরাসরি যুক্ত হয়ে সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড় সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের রানীগঞ্জ সেতুসহ দেশের ‘শতসেতুর’উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সুনামগঞ্জবাসীর বহুদিনের স্বপ্ন শেষে আজ রানীগঞ্জ সেতুর দুয়ার খুলে গেছে। এর ফলে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের যাতায়াতে দুরত্ব কমবে জেলাবাসীর। এরমধ্যে ঢাকার সঙ্গে সময় কমবে ৩ ঘন্টা।
এদিকে রানীগঞ্জ সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে স্থানীয় রানীগঞ্জ বাজারের পাশে রানীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জনসভার আয়োজন করা হয়। এতে সুনামগঞ্জ -৩ আসনের সদস্য সদস্য পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও সর্বস্তরের মানুষ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যয়ালি যুক্ত হন রানীগঞ্জ। বড় পর্দায় স্থানীয়দের অনুষ্ঠানটি দেখানো হয়।
অনুষ্ঠানে ১০ হাজার চেয়ার বসানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী সেতুর উদ্বোধনের পরপরই উৎসবে মেতে উঠেন রানীগঞ্জবাসী।
৭০২ দশমিক ৩২ মিটার দীর্ঘ এবং ১০ দশমিক ২৫ মিটার প্রস্থ এ সেতুর কাজ সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে
২০১৬ সালের ১১ আগস্ট শুরু হয়। কাজ পান ঠিকাদারী প্রতিষ্টান চায়না রেলওয়ে ২৪ ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড ২৪ বি এবং এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড এমবিইএল।
২০১৯ সালের ১০ আগস্ট কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ৬ বছরে এসে গত অক্টোবর মাসে সম্পন্ন হয়। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, সেতুটির নির্মাণ কাজের প্রকল্প নকশা সংশোধন ও করোনা পরিস্থিতির জন্য এই বিলম্ব হয়েছে।
১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ পাগলা-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ শুরু করেন। ২০০১ সালে বিএনপিসহ চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় এলে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ওই সড়কের অপ্রয়োজনীয় উল্লেখ করে সড়কের বরাদ্দ বন্ধ করে দিলে মহাসড়কের স্বপ্নের অকাল মৃত্যু হয়। পরে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এলে সুনামগঞ্জ ৩ (দক্ষিণ সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর) আসনের সংসদ সদস্য বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ওই আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ পুনরায় চালুর প্রচেষ্ঠা চালান। এক পর্যায়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার তালিকা সবুজ পাতায় সড়কটি অন্তর্ভূক্ত করে একনেকে ৫২ কোটি টাকা অনুমোদন করান।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরেরর তথ্য মতে, ২০১৪ সালের ২৫ জুন একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রী এই সেতুর ১২৫ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেন। পরে ওই বছরের জুন মাসে সেতুর দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রে অংশ নেয় দেশী-বিদেশী তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। অবশেষে ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে যৌথভাবে কার্যাদেশ পায় চায়না রেলওয়ে ২৪ ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড ২৪ বি এবং এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড এমবিইএল। পরে ২০১৭ সালের ১৪ জানুয়ারি বর্তমান সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পরিকল্পামন্ত্রী এম এ মান্নানকে সাথে নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নির্মাণকাজ সময়সীমা তিন বছর ও ১২৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প পরবর্তীতে ধাপে ধাপে ব্যয় এবং সময় বাড়ানো হয়।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম জানান,রানীগঞ্জ সেতু উদ্বোধনের পর
গণপরিবহন চলাচল শুর হচ্ছে।
এদিকে রানীগঞ্জ সেতুর জন্য যানবাহনের শ্রেণি ও টোল হার চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে সুনামগঞ্জ সড়ক বিভাগ।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, টোল হারে রিক্সা ভ্যান/রিক্সা/বাইসাইকেল/ঠেলাগাড়ি ৫ টাকা, মোটরসাইকেল ১০ টাকা, অটোটেম্পু, সিএনজি অটোরিক্সা, অটোভ্যান, ব্যাটারী চালিত ৩/৪ চাকার যে কোন ধরণের মোটরাইজড যান ১৫ টাকা, ব্যক্তিগত গাড়ি এবং ভাড়ায় চালিক সকল সিডান কার ৪০ টাকা, পিকআপ, কনভারশনকৃত জীপ, রেকার, ক্রেন ৬০ টাকা, চালক ব্যতীত অন্যান্য ৮ জন এবং অনধিক ১৫ জন যাত্রী বহনকারী যান ৬০ টাকা, চালক ব্যতীত অনধিক ৩০ জন যাত্রী বহনকারী যান ৭৫ টাকা, পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর ৯০ টাকা, ৩ টন পর্যন্ত পে—লোড ধারণে সক্ষম যানবাহন ১১৫ টাকা, চালক ব্যতীত ৩১ অথবা তদুর্ধ্ব আসন বিশিষ্ট মোটরযান ১৩৫ টাকা, দুই এক্সেল বিশিষ্ট বিজিট ট্রাক/বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টর এবং ট্রেইলার ১৫০ টাকা, তিন বা ততোধিক এক্সেল বিশিষ্ট ট্রাক, কাভার্ড ট্রাক/ভ্যান, কনটেইনারবাহী ট্রাক, অন্যান্য আর্টিকুলে ট্রেড যানবাহন ৩০০ টাকা, কন্টেইনার, ভারী যন্ত্রপাতি, ভারী মালামাল/ সরঞ্জাম ৩৭৫ টাকা।
রানীগঞ্জ সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার দিন থেকে টোল কার্যকর হবে।
সূত্র : জগন্নাথপুর টোয়েন্টিফোর।