হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে স্ত্রীর সামনেই পরকিয়া প্রেমিকা ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। পরকিয়া প্রেমিক ও তার স্ত্রী সম্মিলিত ভাবে এ হত্যা কান্ডের ঘটনা ঘটনায়। গ্রেফতারের পর আদালতে ঘাতক স্বামী ও তার স্ত্রী স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে। আজ বুধবার সন্ধ্যায় হবিগঞ্জের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন-গত ৬ ফের্রুয়ারি দিবাগত রাতে চুনারুঘাট থানার রানীগাঁও ইউনিয়নের যুগির আসন নামক টিলায় ২২ বছর বয়সী অজ্ঞাত নামা তরুণীর মৃতদেহ পাওয়া যায়। তরুণীর তুথনীর নিচে ধারালো জখম থাকায় পুলিশ নিশ্চিত হয় এটি হত্যাকাণ্ড। অজ্ঞাত নামা তরুণীর নাম-ঠিকানা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত না হওয়ায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা রুজু করেন। বর্ণিত হত্যাকাণ্ডের পর চুনারুঘাট সদর হাসপাতালের জনৈক নার্সের পালিত কন্যা সুমি আক্তারের নিখোঁজের সূত্র ধরে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। সুমি আক্তারের মায়ের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের জন্য বিজ্ঞ আদালতের অনুমতি পাওয়ার পর সুমির ভাই তার বোনকে ফিরে পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে। পুলিশ অন্য সূত্র খুঁজতে থাকে। ২০/২৫ দিন পূর্বে ওই মামলার ঘটনাস্থল প¦ার্শবর্তী এলাকা কারঙ্গী নদীর তীরে ফারুক নামের এক লোককে ঢাকা থেকে এনে হত্যার উদ্দেশ্যে ছুরিকাঘাত করা হয়। উক্ত ঘটনার তদন্তকালে পুলিশ জানতে পারে পাচারগাঁও গ্রামের এক লোক তার পরিচয় গোপন করে কাওছার নামে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহন করেছে। পুলিশ বর্ণিত কাওছারের প্রকৃত পরিচয় জানতে পারে। পুলিশ আরো তথ্য পায় কাওছারের প্রকৃত নাম আফসার এবং সে অত্র মামলার ঘটনার দিন রাতে তার স্ত্রী রিপা বেগমসহ একটি অপরিচিত মেয়েকে নিয়ে পাচারগাঁওস্থ তার মায়ের বাড়ীতে বেড়াতে এসেছিল। রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে ওই রাতেই তারা চলে যায়। কাওছারের মা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে জানায় ঘটনার দিন রাতে তার ছেলে আফসার তার স্ত্রী ও জিন্স প্যান্ট পরিহিত একটি মেয়েসহ বেড়াতে এসেছিল। পুলিশ ওই হত্যাকাণ্ডে আফসারের জড়িত থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে গ্রেফতার করতে তৎপর হয়। এক পর্যায়ে মহিলা পুলিশ আফসারের সাথে প্রেমের অভিনয় শুরু করে। প্রেমিক আফসার তার প্রেমিকা দেখতে আসলে সে পুলিশের জালে ধরা পড়ে। পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে। পবর্তীতে জানতে পারে মেয়েটির প্রকৃত নাম রোকসানা আক্তার মিষ্টি (২২)। তার বাড়ি নোয়াখালী জেলার, চাটখিল থানার কামালপুর গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত খোরশেদ আলম মজুমদার। মিষ্টি তার মায়ের সাথে রাগ করে মৌলভীবাজার শহরে বাসা ভাড়া করে থাকতো। হত্যাকণ্ডের প্রায় এক মাস আগে একদিন ঘটনাচক্রে আসামী রিপার সাথে জনৈক শুকলা এবং মিষ্টির পরিচয় ঘটে। ওই সময়ে মিষ্টি ও শুকলা থাকার জন্য মৌলভীবাজার শহরে ভাড়া বাসা খুঁজতে ছিল। এই সংবাদ জানতে পেরে মিষ্টি ও শুকলাকে রিপা সাবলেট হিসেবে থাকার প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবে রাজি হয়ে শুকলা ও মিষ্টি মৌলভীবাজর শহরে জনৈক চাঁদ মিয়ার দূর্গামহল্লাস্থ রিপার ভাড়া বাসায় ওঠে বসবাস করতে থাকে। ওই বাসায় অপর আসামী রিপার স্বামী মোঃ আফসার মিয়া ওরফে কাওছারও থাকতো। কিছুদিন পর শুকলা সেখান থেকে অন্যত্র চলে যায়। এক বাসায় থাকার সুবাদে মিষ্টির সাথে রিপার স্বামী মোঃ আফসার মিয়া ওরফে কাওছার এর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে অনৈতিক দৈহিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই নিয়ে স্বামী আফসার মিয়া ওরফে কাওছারের সাথে রিপার সম্পকের্র চরম অবনতি ঘটে। আফসারের স্ত্রী রিপা তার সৎ পিতার বাড়িতে চলে যায়। এক পর্যায়ে আফসারের স্ত্রী আফসারকে পরামর্শ দেয় বৃষ্টিকে সরিয়ে দিলেও সে তার কাছে চলে আসবে। অন্যথায় আসবে না। পরে স্ত্রীর পরামর্শক্রমে মিষ্টিকে হত্যা করা হয়। আজ বিকেলে আদালতে গ্রেফতারকৃত আফসার ও তার স্ত্রী আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন, চুনারুঘাট থানার ওসি শেখ নাজমুল হক, ওসি তদন্ত চম্পক দাম।
Leave a Reply