নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) সংবাদদাতা:: গত কয়েক দিনের অব্যাহত বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানিতে নবীগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী দীঘলবাক ও ইনাতগঞ্জ ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে । দুই ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়িঘর ও রাস্তা ঘাট। বিপাকে পড়েছেন মানুষ গবাদি পশু ও হাঁস মোরগ নিয়ে ।
বন্যার পানিতে রাস্তা-ঘাট ও বিদ্যালয় তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে শিক্ষা কার্যক্রম। তাছাড়া দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির কংকট। গত ৪ দিন ধরে অব্যাহত পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দুই ইউনিয়নের মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছেন। প্রতিটি বাড়ীঘরেই পানি। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় এসব এলাকার মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
রাস্তা ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন স্থানের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নে পানিবন্দি গ্রামগুলো হচ্ছে,দিগীরপাড়,ইনাতগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ী,লালাপুর,মোস্তফাপুর,তপথিবাগ,পাঠানহাটি,মনসুরপুর,বাউরকাপন,লতিবপুর,নোয়াগাঁও,প্রজাতপুর,দক্ষিণগ্রাম,কইখাই,উমরপুরসহ প্রায় ১৫টি গ্রাম। এছাড়াও উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের দীঘলবাক,জামারগাঁও,রাধাপুর, বড়পেছি
বাজার,ফাদুল্লা,কুমারকাদা,কসবা,চরগাঁও,মথুরাপুর,মাধবপুর,গালিমপুরসহ প্রায় ২০টি গ্রাম বন্যার পানি গ্রাস করেছে। তাছাড়া এসব এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টান,মাদ্রাসা,মসজিদ পানিতে তলিয়ে গেছে। ইতিমধ্যে পানিবন্দি হওয়ায় অনেকেই পরিবার নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বসতবাড়ি ছেড়ে ঘরে তালা ঝুলিয়ে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। আর অনেক পরিবার ঘরের ভেতর বাঁশ দিয়ে মাছাও তৈরী করে অজানা আতংকে পানির মধ্যেই বসবাস করছেন। মোস্তফাপুর গ্রামের মালা বেগম জানান,আমার ঘরে হাটুর উপরে পানি। রান্না বান্না করতে পারছিনা।
ছেলে মেয়ে নিয়ে পানিইে খাটের উপর বাস করছি। এদিকে গত রোববার নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট আলমগীর চৌধুরী ও নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ-বিন হাসান,উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এসময় তারা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পানিবন্দি মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার ও মোমবাতি বিতরণ করেন।
রোববার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে দুই ইউনিয়নের দুটি বাঁধ ভেঙ্গে কুশিয়ারা নদীর পানি প্রবেশ করায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন থেকে ক্রমশই পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। এলাকার জনসাধারণ ২০০৪ সালের ভয়াবহ বন্যার আলামত হিসেবে বর্তমান পরিস্থিতিকে দেখছেন।
ইনাতগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ীর পুলিশ ইন্সপেক্টর সামছুদ্দিন খাঁন জানান,শনিবার বিকেলে অফিসের ভেতরে পানি প্রবেশ করেছে। পানির মধ্যেই অফিসের দৈনন্দিন কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। তপথিবাগ গ্রামের শেখ ফরিদ জানান,শুক্রবার রাতে ঘুমিয়ে ছিলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি উঠানে হাটু পানি।
লালাপুর গ্র্রামের দিলদার হোসেন বলেন,বাড়ী ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করায় অনেক দুর্ভোগে আছি।
নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ-বিন হাসান বলেন,বন্যা কবলিত এলাকা আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। এলাকায় গিয়ে বন্যায় কবলিত লোকজনের মধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার ও মোমবাতি বিতরণ করেছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোতিা করা হবে। তিনি আরো বলেন,পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা হয়েছে। আমরা আশা করছি এক সপ্তাহের মধ্যে পানি কমে আসবে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট আলমগীর চৌধুরী বলেন,বন্যা দুর্গত মানুষের পাশে সরকার ও উপজেলা প্রশাসন রয়েছে। তিনি বলেন,পরিকল্পনা মাফিক সরকারীভাবে আগামী দিনে কুশিয়ারা বাঁধ স্থায়ীভাবে বেঁধে যাতে এলাকার মানুষকে আমরা স্থায়ীভাবে রক্ষা করতে পারি সে প্রচেষ্টা চালাবো।
Leave a Reply