বাগেরহাট প্রতিনিধি::করোনা সংক্রমন প্রতিরোধে বাগেরহাটে চলছে লকডাউনের প্রথম দিন।বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) ভোর ৬টায় লকডাউন বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থানে রয়েছে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা।জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছে পুলিশের চেকপোস্ট। বেশিরভাগ রাস্তাঘাট রয়েছে ফাকা। গনপরিবহন বন্ধ থাকায় জরুরী প্রয়োজনে রাস্তায় এসে যানবাহন না পেয়ে বিপাকেও পড়েছেন অনেকে। হেটে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে দেখা গেছে অনেককে। বিপাকে পরেছে নিম্ন আয়ের মানুষেরা। লকডাউনের সময় দিনমজুর ও হত দরিদ্রদের খাদ্য সহায়তা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ইজিবাইক ও রিকশা চালকরা।
বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাসস্টান্ড, ট্রাফিক মোড়, সাধণার মোড়, মিঠাপুকুরপাড়সহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশের চেকপোস্ট দেখা যায়। রোগী ও জরুরী পরিবহন ছাড়া অন্য যেকোন পরিবহনকে বাড়িতে ফিরিয়ে দিতে দেখা যায় পুলিশকে। সকল প্রকার গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে হেটে গন্তব্যে যেতে দেখা অনেককে। বাগেরহাট সদর উপজেলার পুটিমারি এলাকার বিউটি দাস বলেন, রাতে লকডাউনের খবর শুনেছি। মনে করেছি শুধু বাস বন্ধ থাকবে। কিন্তু বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখি রিকশা, অটো, মাহিন্দ্রা, ইজিবাইকসবই বন্ধ। কয়রা থানায় জরুরী কাজ, যেতেই হবে।তাই হেটেই রওনা দিয়েছি।
বাবা ও ভাইকে নিয়ে হেটে খুলনা রওনা দেওয়া শিহাব রহমান বলেন, দুইদিন আগে আত্মীয়ের বাড়িতে এসেছিলাম। লকডাউন হওয়ায় খুব বিপদে পড়ে গেছি। তাই হেটে রওনা দিয়েছি। পথি মধ্যে যদি কোন বাহন পাই তাতে উঠে পরব।
আজিজ, সুমন শরীফ, মোঃ আলিফসহ কয়েকজন ইজিবাইক চালক বলেন, করোনা সংক্রমন প্রতিরোধে দেওয়া লকডাউন আমরা মানি। সরকার যেভাবে বলবে আমরা সেভাবে চলব।তবে রাস্তায় না বের হলে, গাড়ি না চালালে আমরা খাব কি। লকডাউনের সময় রিকশা চালক, ইজিবাইক চালক, মাহিন্দ্রা চালকসহ দিনমজুরদের খাদ্য সহায়তা দেওয়ার দাবি জানান তারা।
রিকশা চালক মোঃ আব্দুল কুদ্দুস বলেন, রিকশা না চালালে, রান্না হয় না ঘরে। তাইতো রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। বুঝে শুনে চালাচ্ছি। যেসব জায়গায় পুলিশের চেকপোস্ট রয়েছে, তা এড়িয়ে চলছি।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক বলেন, লকডাউন বাস্তবায়নে আমরা জেলার ১৩টি স্থানে চেকপোস্ট বসিয়েছি। রোগী এবং জরুরী কাজে ব্যবহৃত পরিবহন ছাড়া অন্য কোন পরিবহন চলতে দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়াও পুলিশের ভ্রাম্যমান টিম কাজ করছে। যেসব মানুষ অতিপ্র্রয়োজনে রাস্তায় বের হয়েছে, তাদেরকে মাস্ক পড়া নিশ্চিত করতে পুলিশ কাজ করছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ আজিজুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য বিধি নিশ্চিত করতে এবং সকল বিধি নিষেধ কাযকর করার জন্য জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি সকল উপজেলায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। মানুষকে সচেতন করার জন্য মাইকিংও করা হচ্ছে। মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার আহবান জানিয়েছেন তিনি।
বাগেরহাটে গেল ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ৪২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই নিয়ে বাগেরহাটে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাড়িয়েছে ২ হাজার ৭৯৪ জনে। মারা গেছেন ৭৩ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন দুই হাজার ৩৪ জন। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭৬০ জন। বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) দুপুরে বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. কেএম হুমায়ুন কবির এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে গেল ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার দিক দিয়ে শনাক্তের হারে সব থেকে এগিয়ে রয়েছে বাগেরহাট সদর উপজেলা। সদর উপজেলায় ২১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই হিসেবে বাগেরহাট সদর উপজেলায় শনাক্তের হার ৭১ দশমিক ৪১ শতাংশ।সদর উপজেলার পরেই রয়েছে ফকিরহাটের অবস্থান। গেল ২৪ ঘন্টায় ফকিরহাটে ৩৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মোংলায় ৩২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৭ জন, মোরেলগঞ্জে ২৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৫ এবং চিতলমারী উপজেলায় ৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় এক জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তবে নমুনা পরীক্ষার পরিমান বৃদ্ধি পেলে রোগীর পরিমানও বৃদ্ধি পাবে এমনটি দাবি করেছেন সচেতন মহল।
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. কেএম হুমায়ুন কবির জানান, বাগেরহাটে গত ২৪ ঘন্টায় ১২২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৪২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আমরা বিভিন্ন ভাবে পরীক্ষার পরিমান বৃদ্ধি করেছি, যাতে নিরব সংক্রমন বন্ধ হয়। এছাড়াও ঝুকিপূর্ণ উপজেলা মোংলা, রামপাল ও মোড়েলগঞ্জের উপর স্বাস্থ্য বিভাগের বিশেষ খেয়াল রয়েছে বলে জানান তিনি।
Leave a Reply