নবীগঞ্জ(হবিগঞ্জ)প্রতিনিধি::নবীগঞ্জ পৌর এলাকার কেলী কানাইপুর গ্রামে এক গৃহবধুকে ধর্ষনের চেষ্টা করেছে একই এলাকার নিপু গোপ নামের এক লম্পট। গৃহবধুর চিৎকারে স্থানীয় লোকজন তাকে হাতেনাতে আটক করে। এ সময় এলাকার কতিপয় লোকজনের সহযোগিতায় বিচার শালিসের কথা বলে কৌশলে ছাড়িয়ে নেন তার কাকা দিগেন্দ্র গোপ। ঘটনাটি স্থানীয় যুবকরা মোবাইল ফোনে ভিডিও রেকর্ড ধারন করেছে। তারা উক্ত লম্পটের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি দাবী করলেও গ্রাম্য মাতব্বরগণ ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য ওই গৃহবধু ও তার স্বামীকে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে গৃহবধু নিরুপায় হয়ে গতকাল সোমবার নবীগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।
স্থানীয় সুত্রে জানাযায়, নবীগঞ্জ উপজেলার করগাওঁ ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের মৃত ধীরেন্দ্র গোপের ছেলে নিপু গোপ তার কাকা আমেরিকা প্রবাসীর বাড়ি পৌর এলাকার কেলী কানাইপুর গ্রামে বসবাস করে আসছে। ওই বাসায় স্ত্রী সন্তান নিয়ে ভাড়ায় থাকেন একই ইউপির তারনগাওঁ গ্রামের মৃত শৈলেন্দ্র দাশের ছেলে বনমালী দাশ। বনমালী দাশ পেশায় একজন ধর্মীয় অনুষ্টান কীর্তন শিল্পী। প্রায়ই তিনি বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় অনুষ্টানে থাকেন। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাসার মালিকের ভাতিজা সিএনজি চালক নিপু গোপের কুদৃষ্টি পড়ে বনমালী দাশের সুন্দরী বউয়ের উপর। প্রায় দিনই ওই গৃহবধুকে একা বাসায় নানাভাবে উত্যাক্ত করতো লম্পট নিপু গোপ। বিষয়টি গৃহবধু তার স্বামীকে বলার পর নিপু গোপের স্বজনদের কাছে বিচার প্রার্থী হন বনমালী দাশ। কিন্তু ওই গ্রামে গোপ সম্প্রদায়ের লোকজন বেশী থাকায় ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হন নিরীহ ওই পরিবার। এক পর্যায়ে নিপু গোপের অত্যাচার, নির্যাতনে বাসা ছেড়ে পাশ^বর্তী কালীপদ গোপের বাসা ভাড়া নেন বনমানী দাশ। তবুও নিপু গোপের কুদৃষ্টি, অত্যাচার থেমে থাকেনি। প্রায়ই গৃহবধুর ফোনে বা রাস্তায় একা পেয়ে উত্যাক্ত করাসহ কুপ্রস্তাব দিত। তার কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে স্বামী ও শিশু সন্তানকে হত্যার হুমকী দিত প্রায় সময়ই। গত শনিবার (৩রা জুলাই) সকালে স্বামী বনমালী দাশ ধর্মীয় অনুষ্টান কীর্তনে চলে যান বানিয়াচং উপজেলার চমকপুর গ্রামে। এই খবর জানতে পারেন নিপু গোপ। ওই দিনই দিবাগত রাত সাড়ে ১১ টার দিকে গৃহবধু প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে ঘরে বাহিরে গেলে লুকিয়ে থাকা নিপু গোপ ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে। প্রাকৃতিক কাজ শেষে ঘরে ফিরে গৃহবধু নিপু গোপকে ঘরে দেখে চিৎকার দেয়ার চেষ্টা করলে নিপু গোপ ঝাপটে তার মুখ চেপে ধরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দেয়। এক পর্যায়ে কাটের উপর ফেলে তাকে জোর পুর্বক ধর্ষনের চেষ্টা করে। তাদের ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে গৃহবধুর মুখ থেকে তার হাত সরে গেলে গৃহবধু চিৎকার দেয়। তার সুর চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে গৃহবধুর ঘরে গভীর রাতে নিপু গোপকে দেখে এবং গৃহবধুর কথা শুনে তাকে আটক করে রাখেন। এক পর্যায়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় নিপুর কাকা দিগেন্দ্র গোপন তাকে নিয়ে চলে যান। খবর পেয়ে গৃহবধুর স্বামী বনমালী দাশ বাড়িতে এসে ঘটনার বিস্তারিত শুনে স্থানীয় সমাজপতিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ন্যায় বিচার পান নি। তারা ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা করছেন। এ ব্যাপারে সোমবার বিকালে নবীগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন নির্যাতিত গৃহবধু। নির্যাতিত গৃহবধু এ প্রতিনিধিকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ওই নিপু গোপ তার সাথে কথা না বললে আমাকে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে, এমনকি আমার স্বামী সন্তানকে খুন করিবে বলিয়া হুমকী দিয়ে আসছিল। তার অত্যাচারে বাসা বদল করেও শেষ রক্ষা হলো না। আমার ইজ্জতের উপর হামলা করেছে। গ্রাম্য মাতব্বররা নিপু গোপের পক্ষে কথা বলেন। তারা একই সম্প্রদায়ের লোক। আমরা নিরীহ মানুষ। নির্যাতিত গৃহবধু এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছেন। এ ব্যাপারে নিপু গোপ বলেন, কাউন্সিলর যুবরাজ গোপ বাড়িতে আসলে বিষয়টি দেখে দিবেন বলেছেন। এলাকার সুমন গোপ, প্রিয়তোষ কুড়ি, মিন্টু দেব, তপন গোপগংরা জানান, প্রতিদিনের ন্যায় শনিবার রাতে তারা রাস্তায় হাটা চলা করছিলেন। রাত সাড়ে ১১ টার দিকে একটি মহিলার চিৎকার শুনে দৌড়ে ওই বাসায় যান। গিয়ে নিপু গোপকে এলোমেলোভাবে দেখতে পান। গভীর রাতে ওই বাসায় আসার কারন জানতে চাইলে সন্তোষ জনক কোন জবাব দিতে না পারায় তাকে কিছু উত্তম মাধ্যম দেয়া হয়। তাকে আটকের খবর জানাজানি হলে লোকজনের ভীড় জমে ওই বাসায়। এক পর্যায়ে স্থানীয় মাতব্বরদের সহযোগিতায় উক্ত ঘটনার দৃষ্টান্ত মূলক বিচারের আশ^াস দিয়ে নিপু গোপের কাকা দিগেন্দ্র গোপ তাকে নিয়ে যান। এলাকাবাসী অসহায় গৃহবধু ধর্ষনের চেষ্টাকারী নিপু গোপকে গ্রেফতার পুর্বক দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবী করেছেন।
Leave a Reply