এস.এস শোহান, বাগেরহাট::
ভৈরব, মধুমতি ও সুখী। নাম শুনলেই মনে হয় গ্রামের গৃহস্ত ঘরের তিন বোন। কিন্তু না, কোরবানি উপলক্ষে আদর করে লালন-পালন করা তিন একই খামারীর বিশালাকার তিন ষাড়ের নাম ভৈরব, মধুমতি ও সুখী।ওজন, আকৃতি ও সৌন্দর্যে তারা নজর কারে সকলের।প্রতিদিনই দূরদুরান্তথেকে দর্শনার্থীরা আসছেন তাদের দেখতে। এবার কোরবানির হাট মাতাবে তারা। তবে করোনাকালে নায্যমূল্য নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে ষাড় তিনটির মালিক আবুল হোসেন।
বাগেরহাট সদর উপজেলার বারুইপাড়া এলাকার খামারী আবুল হোসেন। দীর্ঘদিন ধরে গরু লালন-পালন করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। তিন বছর আগে নিজের গোয়ালের একটি গাভীতে জন্ম নেয় ব্রাহমা জাতের ষাড়ের বাচ্চা।কাল কুচকুচে রংয়ের আকর্ষনীয় চেহারার সেই বাচ্চার নাম রাখেন সুখী। সুখী বড় হাতে থাকে। সুখীর বয়স বাড়ার সাথে সাথে হলিস্টিয়ান ফিরিজিয়ান জাতের আরও দুটি ষাড়ের বাচ্চা ক্রয় করেন আবুল হোসেন। নাম রাখেন ভৈরব ও মধুমতি। সম বয়সী হওয়ায় সুখী, ভৈরব ও মধুমতির সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে সে সখ্যতা নষ্ট হয়ে যায়। আড়াই বছর আগে ক্রয় করা হলিস্টিয়ান ফিরিজিয়ান জাতের ষাড় ভৈরবের ওজন এখন ১৮০০ কেজি। পুরো শরীর কালো ও মাথায় সাদা চিতা এক অন্যরকম আকর্ষনীয় চেহারা দিয়েছে ভৈরবকে। তার পিছনের দুটি পা সাদা হলেও সামনের পায়ের বেশির ভাগ অংশ কালো।৯ ফুট লম্বা ও ৫ ফুট সাত ইঞ্চি উচ্চতার এই গরুর দাম হাকা হয়েছে ৪৫ লক্ষ টাকা।
পাঁচ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতা ও ৯ ফুট লম্বা সুখীর ওজন এখন এখন ১৭০০ কেজি।পুরো শরীর কালো সুদর্শণ এই ষাড়ের পেটের দিকে লালছে ভাব রয়েছে।নিজের গোয়ালের এই ষাড়ের দাম চেয়েছেন সুখি’র দাম ৪০ লাখ টাকা। ৯ ফুট লম্বা ও ৫ফুট ৬ ইঞ্চি মধুমতির ওজন এখন ১৫০০ কেজি। কালো শরীর, মাথায় সাদা চিতা পেট ও পায়ের নিচের অংশে সাদা রং থাকা মধুমতি অনেক শান্তস্বভাবের।মালিক আবুল হোসেন এই মধুমতির দাম চেয়েছেন ২০ লক্ষ টাকা।
কোটি টাকা মূল্যের তিন গরুর জন্য আবুল হোসেনকে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার খাবার খাওয়াতে হয়।গরুর যত্ন, গোসল ও খাবার প্রদানের জন্য আবুল হোসেন ও তার স্ত্রী পাপিয়া হোসেন ছাড়াও রয়েছে আবুলের ছোট ভাই হাসান আলী।নিজেদের জমিতে উৎপাদিত ঘাষ, কুটা, দেশীয় ফল মুলের পাশাপাশি প্রতিদিন দশ কেজি করে দানাদার (খৈল, ভুট্টো, ছোলা, গমসহ নানা প্রকার বীজ) খাবার খায় প্রতিটি গরু।এই তিন বছর ধরে এই গরু পালন করতে গিয়ে ঋণও করেছেন আবুল হোসেন।
এক সাথে বিশালাকৃতির তিন গরু দেখতে প্রতিদিনই ভীড় জমায় স্থানীয়রা। কিছুটা বিরক্ত হলেও হাসিমুখে দর্শনার্থীদের গরু দেখান খামার মালিকরা।
খামারী আবুল হোসেন বলেন, গত বছর কোরবানিতেও ষাড় তিনটি বিক্রির জন্য চেষ্টা করেছি। হাটেও নিয়েছি। কিন্তু করোনার কারনে উপযযুক্ত ক্রেতার অভাবে বিক্রি করতে পারিনি। করোনার পরিস্থিতির কারণে এবারও শঙ্কায় রয়েছি। আসলে কি হবে জানি না। অনেক সখ ও ত্যাগ স্বীকার করে একসাথে তিনটি ষাড় বড় করেছি। এতবড় গরু বাগেরহাট ও আশাপাশের জেলায় নেই।এই গরুর পিছনে আমার পরিবারের সকলের শ্রম রয়েছে। তিনটি গরু কোটি টাকায় বিক্রি করতে চাই।ন্যায্য মূল্যে পেতে সরকারী সহায়তা কামনা করেন তিনি।
খামারের দেখভালের কাজে নিয়োজিত হাসান বলেন, ভাই-ভাবির সাথে সবসময় আমিও এই গরুর পিছনে পরে থাকি। দুই বেলা গোসল, বাতাস দেওয়া, চার থেকে পাঁচবার খাবার দেওয়া, গোয়ালঘর পরিস্কারসহ প্রতিদিন নানা কাজ করতে হয়। আমরা এই গরুকে কোন প্রকার হরমন বা মোটাতাজাকরণ ঔষধ সেবন কারাইনি।
গরু দেখতে আসা পাশ্ববর্তী ফকিরহাট এলাকার জিহাদ, মিরাজ শেখ ও রোকসানা বেগম বলন, প্রতিদিন সকাল-বিকাল আমরা আবুলের বাড়িতে আসি। গরু তিনটি দেখি। আমাদের খুব ভাল লাগে। আশেপাশের লোকজনও এখানে ভিড় করে। অনেকে আবার গরুর সাথে ছবিও তোলে। আমাদের জানামতে এত বড় গরু আমাদের জেলায় নেই।
আবুলের প্রতিবেশী শেখ মোহাম্মাদ আলী বলেন, গরু তিনটি বড় করতে আবুলরা দুই ভাই ও আবুলের স্ত্রী যে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। প্রতিদিন অনেক লোক আসে এই গরু দেখতে। কিন্তু গরু কেনার লোক আসে না।কোরবানিও প্রায় চলে আসছে। আমরা সবাই চাই আবুল যেন নায্য দামে তার গুর তিনটিকে বিক্রি করতে পারেন।
আবুলের স্ত্রী পাপিয়া বলেন, তিনটি ষাড়ের পাশাপাশি আমাদের আরও চারটি গরু রয়েছে। এই গরুর পিছনেই আমাদের রাত-দিন যায়।অনেক কষ্ট করে গরু তিনটিকে বড় করেছি।কিন্তু করোনার কারণে মনে আনন্দ নেই। ভাল দামে না বিক্রি করতে পারলে খুবই লোকসানে পড়তে হবে।নায্যমূল্যে গরু বিক্রির জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন এই নারী।
বাগেরহাট জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ লুতফর রহমান বলেন, বাগেরহাটে দিন দিন বড় গরু লালন পালনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফ্রিজিয়ান, শাহী ওয়াল, ব্রাহমা জাতের ষাড় বেশি পালন করছে খামারীরা। সদর উপজেলার আবুলের গরু তিনটি আমি দেখেছি। আমাদের পরামর্শ নিয়ে সে গরু পালন করে। কোন প্রকার হরমন বা স্টেরয়েড এই গরুর জন্য আবুল ব্যবহার করেনি। সম্পূর্ণ দেশীয় খাদ্য-খাবার দিয়ে সে গরু পালন করেছে।
তিনি আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে জেলার মধ্যে বড় গরুর ক্রেতা পাওয়া একটু কষ্ট সাধ্য। তাই আমরা অনলাইন ও বড় বড় শহরে বিভিন্ন ভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছি। যাতে খামারীরা নায্যমূল্য পায় সে জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
Leave a Reply