নিজস্ব সংবাদদাতা :সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে মোবাইল ফোন চার্জ দেয়া নিয়ে দ্বিতীয়দিনের সংঘর্ষে দুপক্ষের শতাধিক লোক আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে আহত হয়েছে পুলিশের পাঁচ সদস্য। এ নিয়ে দু’দিনের সংঘর্ষে দেড় শতাধিক লোক আহত হয়েছেন।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাত থেকে রোববার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুর পর্যন্ত মাইকে ঘোষণা দিয়ে কয়েক দফা সংঘর্ষে জড়ায় দু’পক্ষের লোকজন। পরে সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিষয়টি সালিসে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, শনিবার বিকেলে বর্নি গ্রামের এক ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইল ফোন চার্জ দেয়া নিয়ে ইসলামপুর গ্রামের আরেকজনের তর্কাতর্কি হয়। এসময় কোম্পানীগঞ্জ ও কাঁঠালবাড়ি গ্রামের দুজন তাদেরকে থামাতে যান। কিন্তু ঘটনা গড়ায় হাতাহাতিতে।বর্নি ও কোম্পানীগঞ্জের দুজন আঘাতপ্রাপ্ত হন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে কাঁঠালবাড়ি ও কোম্পানীগঞ্জ গ্রামের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাজারে অবস্থান নেন।
একপক্ষ উপজেলা ভূমি অফিসের আশপাশে এবং অপরপক্ষ বাজারের পয়েন্ট এবং উত্তরা ব্যাংকের পাশে অবস্থান নেয়। উভয়পক্ষের মধ্যে চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। পরে এটি সংঘর্ষে রূপ নেয়। রাত ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত টানা তিন ঘণ্টা চলে এই সংঘর্ষ।
এসময় দুটি মোটরসাইকেল আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বাজারে বেশ কয়েকটি দোকান ভাংচুর ও লুটপাট হয়। বর্নি পয়েন্টে গাড়ি আটকিয়ে চলে তল্লাশি। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের পঞ্চাশের অধিক লোক আহত হন। রাতে সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে, এ ঘটনার জের ধরে রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল থেকে সংঘর্ষের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন উপজেলার বর্নি, কোম্পানীগঞ্জ ও কাঁঠালবাড়ি গ্রামের লোকজন। সিএনজিচালিত অটেরিকশায় মাইক বেঁধে গ্রামের লোকজনকে সংঘর্ষের জন্য বেরিয়ে আসার আহবান জানানো হয়। ফেইসবুকে চলে উস্কানিমূলক স্ট্যাটাস। পরে ঘটনাটি আর তিন গ্রামের মধ্যে আটকে থাকেনি। আশপাশের আরও কয়েকটি গ্রামের লোকজন দু’পক্ষের হয়ে সংঘর্ষে নামেন। এতে করে পরিস্থিতি দ্রুত থমথমে হয়ে ওঠে।
এরপর বেলা ১১টার দিকে দুপক্ষের লোকজন থানাবাজার মোড়ে এসে সংঘর্ষে জড়ান। সহস্রাধিক মানুষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় এলাকা। সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়কের উভয়পাশে আটকা পড়ে বহু যানবাহন। থানাবাজার এলাকায় বন্ধ থাকে সকল দোকানপাট। সংঘর্ষ চলাকালে দেশীয় অস্ত্র, ইটপাটকেলের আঘাতে উভয় পক্ষের শতাধিক আহত হন। এ সময় সংঘর্ষ ঠেকাতে ব্যর্থ হয় পুলিশ। পরে বেলা আড়াইটার দিকে বিপুল সংখ্যক সেনা সদস্য, পুলিশ ও র্যাব এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অপরদিকে, সংঘর্ষ থামাতে শনিবার রাত থেকেই চেষ্টা চালাচ্ছিলেন উপজেলার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ। রোববার বিকেলে পরিস্থিতি শান্ত হলে বিষয়টি সালিসে নিষ্পত্তির জন্য বৈঠকে বসেন তারা৷ উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে বৈঠকে গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম, জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজী মো. সাহাব উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মো. আলী আকবর, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান লাল মিয়া, এডভোকেট কামাল হোসেন, হাজী আবুল হোসেন, নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন, কোম্পানীগঞ্জের পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী জিয়াদ আলী, তেলিখাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী আব্দুল ওয়াদুদ আলফু, পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বাবুল মিয়া, উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা ফয়জুর রহমানসহ উপজেলার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
রোববারের সংঘর্ষে শতাধিক আহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কামরুজ্জামান রাসেল। তিনি বলেন, ‘সংঘর্ষে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ বলেন, রোববার বিকেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে এবং থানাবাজারে অবস্থান করছে। সংঘর্ষ চলাকালে ইটের আঘাতে ৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ২০ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে।
Leave a Reply