ডেস্ক রিপোর্ট ::
বাংলার সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল বায়োস্কোপ। এক সময় গ্রামবাংলার হাট-বাজার, মেলা কিংবা রাস্তার ধারে দেখা মিলত এই ঐতিহ্যবাহী ভ্রাম্যমাণ সিনেমার। বায়োস্কোপওয়ালা তার রঙিন বাক্স কাঁধে নিয়ে শিশু-কিশোরদের ঘিরে ধরার আহ্বান জানাতো, আর দর্শকেরা উঁকি মেরে দেখত রঙিন ছবি, ঐতিহাসিক কাহিনি বা দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান।
কিন্তু সময়ের বিবর্তনে প্রযুক্তির আধুনিকায়নে হারিয়ে যেতে বসেছে এই ঐতিহ্য। টেলিভিশন, স্মার্টফোন, ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার ফলে মানুষ এখন ঘরে বসেই বিনোদনের সব সুবিধা পাচ্ছে। ফলে বায়োস্কোপের মতো ঐতিহ্যবাহী বিনোদন মাধ্যমগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। তবুও কিছু মানুষ আছেন, যারা এখনো এই পেশার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। তারা গ্রামে-গঞ্জে, শিশুদের স্কুলে কিংবা বিভিন্ন মেলায় বায়োস্কোপ দেখিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
বায়োস্কোপওয়ালাদের জীবনসংগ্রাম
বর্তমানে বায়োস্কোপওয়ালাদের সংখ্যা খুবই কম। যারা এখনো এই পেশায় আছেন, তাদের জীবনযাত্রা খুব একটা স্বচ্ছল নয়। আগের মতো দর্শকের ভিড়ও দেখা যায় না। তবুও তারা ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবং মানুষকে আনন্দ দিতে বায়োস্কোপ দেখিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে শিশুদের কাছে এটি এক অন্যরকম বিনোদন।
অনেকেই মনে করেন, সঠিক উদ্যোগ নেওয়া হলে এই ঐতিহ্যবাহী বিনোদন মাধ্যমটিকে সংরক্ষণ করা সম্ভব। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে বায়োস্কোপ প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বায়োস্কোপকে নতুনভাবে জনপ্রিয় করা সম্ভব।
ঐতিহ্য সংরক্ষণে করণীয়
বাংলার লোকসংস্কৃতির অন্যতম নিদর্শন বায়োস্কোপ রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে একে মানিয়ে নিতে নতুনভাবে পরিকল্পনা করা যেতে পারে। যেমন ডিজিটাল বায়োস্কোপ তৈরি করে শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় করা যেতে পারে। স্থানীয় পর্যায়ে সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে বায়োস্কোপকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
একসময় বায়োস্কোপ ছিল শিশু-কিশোরদের প্রধান বিনোদন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি হারিয়ে যেতে বসেছে। আমাদের উচিত এই ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করা, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বাংলার লোকসংস্কৃতির এই গুরুত্বপূর্ণ অংশ সম্পর্কে জানতে পারে এবং উপভোগ করতে পারে।
Leave a Reply