স্টাফ রিপোর্টার ॥অভাবের সাথে লড়াই করে প্রিয়জনদের মুখে হাসি ফোটাতে গিয়েছিলেন দূর মালয়েশিয়ায়। একটু একটু করে সুখের দুয়ার খুলতে শুরু করেছিল, কিন্তু সব স্বপ্ন থেমে গেল হঠাৎ করেই। না ফেরার দেশে চলে গেলেন হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাশা গ্রামের বাইন্না বাড়ির সন্তান মহিবুর রহমান (৩০)।
মহিবুর ছিলেন পরিবারের বড় ছেলে। মা, বাবা, এক ভাই, এক বোন, স্ত্রী ও একমাত্র কন্যা সন্তানকে নিয়ে গড়া ছোট্ট সংসারে অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। দেশে সিএনজি অটোরিকশা চালিয়ে কোনোমতে সংসার চলতো। পরিবারের মুখে একটুখানি হাসি ফোটাতে প্রায় দেড় বছর আগে পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়।
পরিশ্রমে বিশ্বাসী মহিবুর প্রবাসে গিয়েও থেমে থাকেননি। কাজ করতেন প্রতিদিন, স্বপ্ন বুনতেন রাত-দিন। ধীরে ধীরে অভাব দূর হচ্ছিল, পরিবারের জন্য একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফিরছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই সব থেমে গেল। বৃহস্পতিবার ভোরে কাজে যাওয়ার প্রস্তুতির সময় বাথরুমে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। সেখানেই শেষ হয়ে যায় একটি জীবন, থেমে যায় একটি পরিবারের সকল আশা।
মহিবুরের মৃত্যুর খবর তার রুমমেটের মাধ্যমে পৌঁছে যায় দেশে। সঙ্গে সঙ্গেই নেমে আসে শোকের ছায়া। মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী ও সন্তান দিশেহারা। স্ত্রী কান্নায় ভেঙে পড়েছেন, মেয়েটি এখনও বুঝে উঠতে পারেনি—তার বাবা আর কখনো ফিরে আসবেন না।
তার মামাতো ভাই ও আজমিরীগঞ্জের সিএনজি শ্রমিক নেতা ইব্রাহিম মিয়া জানান, মহিবুর যে কোম্পানিতে কাজ করতেন, তারাই মরদেহ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করছে।
আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিবির রঞ্জন তালুকদার বলেন, “বিষয়টি আমরা শুনেছি এবং পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। সরকারি সহযোগিতা ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহায়তা যেন তারা পান, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
একজন পরিশ্রমী সন্তানের স্বপ্নভঙ্গের কষ্ট আজ একটি পরিবারের নয়, একটি সমাজেরও বেদনার গল্প হয়ে থাকলো।
Leave a Reply