শিশু শ্রম:একটি সামাজিক অভিশাপ

ডেস্ক নিউজ ::

শিশু শ্রম বর্তমানে আমাদের সমাজের এক গম্ভীর সমস্যা। শিশুদের যেই বয়সে বিদ্যালয়ে গিয়ে পড়াশোনা, খেলা-ধুলা ও আনন্দে বেড়ে ওঠার কথা, সেই বয়সে তারা জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। এটি শুধুমাত্র শিশুদের শৈশব কেড়ে নিচ্ছে না, বরং একটি জাতির ভবিষ্যৎকেও বিপন্ন করছে।

দারিদ্র্য, শিক্ষা সম্পর্কে অজ্ঞতা, পরিবারের চাপ এবং সামাজিক অনিয়ম শিশু শ্রম বৃদ্ধির প্রধান কারণ। অনেক বাবা-মা সন্তানদের স্কুলে না পাঠিয়ে কাজে লাগিয়ে সামান্য আয় করতে চান, যা স্বল্পমেয়াদে সাহায্য করলেও দীর্ঘমেয়াদে তাদের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। শিল্প কারখানা, চায়ের দোকান, গৃহস্থালি কাজ, ইটভাটা এবং কৃষিকাজে শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে অবলীলায়, যা তাদের স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাধা দিচ্ছে।

শিশু শ্রম শুধুই একটি অর্থনৈতিক সমস্যা নয়, এটি একটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়। জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী, প্রতিটি শিশুর শিক্ষার অধিকার, বিশ্রামের অধিকার এবং খেলাধুলার অধিকার রয়েছে। কিন্তু শিশু শ্রম সেই অধিকারগুলোকে পদদলিত করে।

এই সমস্যার সমাধানে প্রয়োজন সরকারি উদ্যোগ, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আইন প্রয়োগ। সরকার শিশু শ্রম নিষিদ্ধ করে আইন করলেও এর বাস্তব প্রয়োগ এখনো দুর্বল। পরিবার ও সমাজকেও বুঝতে হবে, একটি শিক্ষিত শিশু আগামীতে অনেক বড় সম্পদ হতে পারে।

শিশু শ্রম বন্ধ করতে হলে দরিদ্র পরিবারকে সহযোগিতা করতে হবে, স্কুলে ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে, এবং এমন একটি সমাজ গড়তে হবে যেখানে প্রতিটি শিশু তার শৈশব উপভোগ করতে পারে, বেড়ে উঠতে পারে একজন সুস্থ, শিক্ষিত এবং মানবিক মানুষ হিসেবে।
শিশু শ্রম কোনো একটি একক সমস্যার নাম নয়, এটি একটি বৃহৎ সামাজিক ব্যাধি। এর সমাধান আমাদের সবাইকে একসাথে এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে—শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ, তাদের হাতে তুলে দিই বই, কলম, আর স্বপ্নের ডানা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা