ডেস্ক রিপোর্ট ::
প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এক নীরব বিপ্লব ঘটিয়ে চলেছে। একসময় যা ছিল কল্পবিজ্ঞানের অংশ, আজ তা আমাদের হাতের মুঠোয়। কিন্তু এই পরিবর্তন কি শুধু আমাদের জীবনকে সহজ করছে, নাকি এর গভীরতর কোনো প্রভাব আছে?
সম্পর্ক ও যোগাযোগ
প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় অবদান হলো যোগাযোগের সহজলভ্যতা। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, বা ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো আমাদের একে অপরের সঙ্গে যুক্ত রেখেছে। কিন্তু এই মাধ্যমগুলো কি সম্পর্কের গভীরতা বাড়াচ্ছে, নাকি কমিয়ে দিচ্ছে? আমরা এখন শত শত বন্ধুর সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকলেও, বাস্তবে আমাদের সামাজিক বন্ধন কি দুর্বল হয়ে পড়ছে না? একজন মানুষের পাশে বসেও যখন আমরা নিজেদের স্মার্টফোনে বুঁদ হয়ে থাকি, তখন সেই নীরবতা হয়তো আমাদের সম্পর্কের ফাটলকেই প্রকাশ করে।
কাজ ও কর্মসংস্থান
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং রোবটিক্স এখন বহু কাজ মানুষের হাত থেকে নিয়ে নিচ্ছে। একদিকে যেমন এর ফলে উৎপাদনশীলতা বাড়ছে, অন্যদিকে তেমনি কর্মসংস্থান নিয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন সংকট। ভবিষ্যতে এমন অনেক পেশা হয়তো বিলুপ্ত হয়ে যাবে, যা নিয়ে আমরা এখন ভাবছিও না। তবে প্রযুক্তির এই অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন কাজের সুযোগও তৈরি হচ্ছে। যেমন- ডেটা সায়েন্টিস্ট, সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট, বা সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের মতো পেশাগুলো প্রযুক্তিরই অবদান।
তথ্য ও শিক্ষা
প্রযুক্তি আমাদের জ্ঞানের ভাণ্ডারকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। গুগল, উইকিপিডিয়া বা বিভিন্ন অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে আমরা যেকোনো বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারি। কিন্তু তথ্যের এই অবাধ প্রবাহ কি আমাদের চিন্তাভাবনার স্বাধীনতাকে প্রভাবিত করছে? আমরা অনেক সময়ই কোনো বিষয় গভীরভাবে না ভেবেই, শুধু ইন্টারনেটে পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিই। এতে আমাদের নিজস্ব চিন্তাশক্তির বিকাশ কি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না?
প্রযুক্তি নিঃসন্দেহে আমাদের জীবনকে অনেক সুবিধা দিয়েছে। কিন্তু এর ভালো দিকগুলোর পাশাপাশি কিছু নেতিবাচক দিকও আছে। আমাদের সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রযুক্তির প্রভাব এখন স্পষ্ট। তাই এই প্রযুক্তির ব্যবহার কেমন হবে, তা নির্ভর করছে আমাদের সচেতনতার ওপর। আমরা যদি এর সঠিক ব্যবহার করতে পারি, তবেই এটি আমাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে থাকবে।
রাকি হোসেন। ( সাংবাদিক)
Leave a Reply