নবীগঞ্জ( হবিগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা: নবীগঞ্জের আলোচিত প্রতারক নারী ফরজুন আক্তার মনির বিভিন্ন অপরাধের বিষয়ে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করতে নবীগঞ্জ উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত সভায় বিস্তারিত আলোচনান্তে সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যা গতকাল সোমবারের সভায় দেয়া রেজুলেশনে প্রকাশ হয়েছে। ওই রেজুলেশন সূত্রে প্রকাশ, সভায় নবীগঞ্জ থানার বিদায়ী অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন- ‘বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত ফরজুন আক্তার মনিকে গ্রেফতার করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি এ মহিলার জেন্ডার পরীক্ষা করা প্রয়োজন আছে মর্মেও সভাকে অবহিত করেন।’
এ সময় হবিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ মিলাদ গাজী সভায় দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করে বলেন- ‘বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত গ্রেফতারকৃত ফরজুন আক্তার মনির জেন্ডার পরীক্ষা করার প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য থানার অফিসার ইনচার্জকে পরামর্শ দেন।’
উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা বেগম তার বক্তব্যে ‘কিছুদিন আগে ফরজুন আক্তার মনি কর্তৃক সাংবাদিক আজাদ ও সাবেক মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ও তাকে জড়িয়ে যে মামলা করেছে তার তীব্র নিন্দা জানান।’ সভায় তিনি আরো বলেন- ফরজুন আক্তার মনি বিভিন্ন সময়ে ভূয়া ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে বিভিন্ন মোবাইল নম্বর থেকে তাকে এবং সাবেক মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাসহ অসংখ্য নারীকে কূরূচিপূর্ণ ম্যাসেজ দিয়ে যৌন হয়রানী করে এবং তার কথায় সাড়া না দেয়ায় সবার সাথে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করতে থাকে। সে নিজেকে বিভিন্ন গন্যমান্য ব্যক্তি এবং উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার আত্মীয় পরিচয় দিয়ে এলাকার বিভিন্ন সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা ও ব্লেক মেইল করে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করে। সাধারণ জনগন ভয়ে এসবের প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। ফরজুন আক্তার মনি রহস্যজনক জীবন যাপন করছে উল্লেখ করে তিনি তার রহস্যময় জীবনাচার উন্মোচন করে তার অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ জানান।’
এ ছাড়াও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম তার বক্তব্যে – ‘বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত গ্রেফতারকৃত ফরজুন আক্তার মনিকে গ্রেফতার করায় নবীগঞ্জ থানা পুলিশকে ধন্যবাদ জানান এবং তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানান।’
নবীগঞ্জ উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় উল্লেখিতদের এসব বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আলোচিত প্রতারক নারী ফরজুন আক্তার মনির বিভিন্ন অপরাধের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করতে সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
প্রসঙ্গত, নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন সরকারী কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও সিনিয়র সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে মানহানীকর মিথ্যা স্ট্যাটাস এবং বিভিন্ন ভূয়া একাউন্ট খোলে প্রতারণার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা ও তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলায় ফরজুন আক্তার মনিকে গত ২২ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই নারী দীর্ঘদিন যাবত নিজেকে সাংবাদিক ও মানবাধীকার কর্মী পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজনের সাথে প্রতারণা করে আসছিল। তার টার্গেট ছিল- নারী জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা ও স্কুল-কলেজের ছাত্রী। প্রতি রাতেই নারীদের বিভিন্ন অশালীন ম্যাসেজ দিতো। এসব ম্যাসেজের স্ক্রীণশর্ট প্রকাশ হওয়ায় মনি নারী না পুরুষ এনিয়েও প্রশ্ন উঠে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই সমীর দাশ ফরজুন আক্তার মনির বিরুদ্ধে ৫দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। গত বৃহস্পতিবার দীর্ঘ শুনানী শেরাষ্টষে বিজ্ঞ বিচারক এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পক্ষে শুনানী করেন এডভোকেট শাহ ফখরুজ্জামান, এডভোকেট বদরু মিয়া ও তাজ উদ্দিন সুফিসহ ৭/৮জন আইনজীবী। আসামী পক্ষে শুনানী করেন এডভোকেট আব্দুল মালেক হৃদয় ও জেলা আওয়ামীলীগের নেতা এডভোকেট আবুল ফজল। আদালত পরিদর্শক আল আমিন রিমান্ড মঞ্জুরের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
Leave a Reply